সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

সাতশ’ বছর পুরনো মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন

শামীম আহমেদ বরিশাল
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩

বরিশালে গায়েবি মসজিদ’

বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার কসবা মহল্লার গায়েবি ‘আল্লাহর মসজিদ’। প্রায় সাতশ’ বছরের পুরনো মুসলিম স্থাপত্যের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। মসজিদটি দেখতে অনেকটা বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের মতোই। যে কারণে ধারণা করা হচ্ছে পঞ্চদশ শতাব্দীতে হযরত খান জাহান আলীর (রহ.) আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। তবে কেউ কেউ দাবি করছেন মসজিদটি গায়েবিভাবে উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে মতানৈক্য। তবে যাই হোক না কেন ঐতিহাসিক এ আল্লাহহর মসজিদটি একনজর দেখতে প্রতি দিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। এছাড়া মনের আশা পূরণ হওয়ায় জন্য অনেকেই মানত নিয়ে আসেন। আবার অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এ মসজিদে এসে নফল নামাজ আদায় করেন। ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় সাত ফুট চওড়া। এছাড়াও পাতলা ইট আর চুন-সুরকির এ মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে মোট পাঁচটি শিখরাকার সরু উঁচু খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথের খিলানের ওপরের প্যানেলে কিছু ফুল ও ডায়মন্ড অলংকরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ছাদ বরাবর চারদিকে কার্নিস রয়েছে, যেগুলো মসজিদের চারকোণে থাকা স্তম্ভের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। নয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অভ্যন্তরে চারটি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে এবং পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মাঝখানের মিহরাবটি আকারে বড়। মসজিদের চারপাশে হাঁটার জন্য রয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। এছাড়াও মসজিদ কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে রয়েছে বিশাল দীঘি। যেখানে নারী-পুরুষদের গোসল ও অজুর জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্যও আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মসজিদের খাদেম বাবুল ফকির বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঐতিহাসিক এ মসজিদের খাদেম হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে শুনে আসছি প্রায় সাতশ’ বছর পূর্বে এ মসজিদটি জিন দ্বারা নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের ব্যাপারে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনীর কথা বর্ণিত রয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো মাদারীপুরের রাজৈর বাজিতপুর এলাকার আল্লাহভক্ত পাগল আব্দুর জব্বার ওরফে বাবর আলী খন্দকার একরাতে বর্তমান মসজিদ এলাকায় (তৎকালীন) ঝোপজঙ্গলে ঘেরা কসবা গ্রামে ধ্যানে মগ্ন হন।পরের দিন সকালে তিনি ধ্যান ভেঙে বলেন, আগামী রাতের মধ্যে ঝোপজঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকায় অলৌকিকভাবে একটি মসজিদ হবে। তখন স্থানীয়রা ওই পাগলের মুখের কথা বিশ্বাস না করলেও ঠিক পরেরদিন রাতের মধ্যেই ওই এলাকায় অলৌকিকভাবে একটি মসজিদ নির্মিত হয়। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হয়েছে এ মসজিদটি জিন দ্বারা নির্মিত হয়েছে। বাবুল ফকির আরও বলেন, দীর্ঘদিন পূর্বে মসজিদের অভ্যন্তরের পাথরের স্তম্ভ থেকে অলৌকিকভাবে তৈলাক্ত পদার্থ বের হতো। পরবর্তীতে আগত ভক্তরা বিভিন্ন মানতে ওই তৈলাক্ত পদার্থ শরীরে মেখে আরোগ্য পেতেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কতিপয় ব্যক্তি তৈলাক্ত পদার্থ নিয়ে আগত ভক্তদের কাছ থেকে ব্যবসা শুরু করায় অলৌকিকভাবে তৈলাক্ত পদার্থ বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে নানা অলৌকিকতার জন্য মসজিদটি গায়েবি ‘আল্লাহর মসজিদ’ নামে সবার কাছে পরিচিত। এ মসজিদ নির্মাণের তারিখ সংযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া না গেলেও আরও জনশ্রুতি রয়েছে, স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে কসবা এলাকার জঙ্গলকে চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য একদল লোক জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার সময় এ মসজিদটির সন্ধান পান। মসজিদের কোনো প্রতিষ্ঠাতা বা নির্মাণকারীর সন্ধান না পেয়ে তখন ওই এলাকার মুসলমানরা এর নাম রাখেন গায়েবি আল্লাহর মসজিদ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com