আলোচিত সেনাশাসক এইচএম এরশাদের হাতেগড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিতে এখন দুইজন চেয়ারম্যান। একজন হলেন- তার ছোটভাই জিএম কাদের, অপরজন হলেন- তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। জিএম কাদের ভারত সফরে থাকার সুযোগে গতকাল মঙ্গলবার নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। তবে এরশাদপত্নীর এই দাবিকে ‘ভুয়া খবর’ বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দলের অন্য শীর্ষ নেতারাও বলছেন, তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে সম্মতি দেননি।
বরাবরই জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আলোচনায় শীর্ষে চলে আসে জাতীয় পার্টি। প্রায় সময়ই খবরের শিরোনাম হয় ক্ষমতাসীন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট এই দলটি। এবার খবরের শিরোনাম হলো- দলের চেয়ারম্যান পদে দুজন থাকা নিয়ে। এর আগে ২০১৯ সালের এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কয়েকদফা টানাটানি হয় দেবর-ভাবির মধ্যে। দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। বেশির ভাগ নেতা জিএম কাদেরকে সমর্থন করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। এতদিন জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদ কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এদিকে গত শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ। এর পরপরই রওশন এরশাদকে নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়।
ওদিকে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে রোববার ভারতে সফরে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। ২২শে আগস্ট তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। আজ সকালে জিএম কাদেরের অনুপস্থিতিতে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টির প্যাডে রওশন এরশাদের সই করা একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, আমি বেগম রওশন এরশাদ, এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কো-চেয়ারম্যান। এই মর্মে ঘোষণা করছি যে, পার্টির সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তক্রমে দলের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশের পরপরই পাল্টা এক ভিডিও বার্তা দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসলে এটা একটা ফেক নিউজ।
প্রথমত হলো- এ ধরনের নিউজটা যারা দিয়েছেন কয়েকজন কো-চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে – তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত দেন নাই বা এ ধরনের সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করেন নাই। সাইন দেন নাই। দেয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয়ত হলো- জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ ইচ্ছা করলেই চেয়ারম্যান হতে পারবে না। ইচ্ছা করলেই যে কাউকে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। এটার একটা নিয়ম আছে। সেই নিয়মের মধ্যে পড়তে হবে। জাতীয় পার্টি গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। আমার মনে হয়, কিছু ব্যক্তি যারা দল থেকে বহিষ্কৃত তারা ম্যাডামের (রওশন) নামটা ব্যবহার করে এরকম একটা ফেক নিউজ দিয়েছে। আমি সারা দেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অনুরোধ করবো-এ ধরনের কোনো ঘটনা জাতীয় পার্টিতে ঘটেনি। বা ঘটার সুযোগ নাই।