আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে সূরা মুমিনুনে ইরশাদ করেন, আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান থেকে। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আঁধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি (সূরা মুমিনুন : ১২-১৪)।
আলোচ্য আয়াতে মানবজাতি সৃষ্টির সূচনা বর্ণনা করেছেন। যাতে করে মানুষ তার স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তায়ালার প্রতি ঈমান আনে ও আনুগত্য প্রকাশ করে, তাঁর অবাধ্য অকৃতজ্ঞ না হয়। আল্লামা ইবনে কাসীর রহ: এ আয়াতের তাফসিরে মুসনাদে আহমদে হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে, আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ:-কে এক মুষ্টি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যা সারা পৃথিবী থেকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। আর এ কারণেই আদম সন্তানের বর্ণ হয়েছে বিভিন্ন। কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ অন্য কোনো বর্ণের আর তাদের মধ্যে কেউ নেক, কেউ বদ। রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, মানুষের সারা শরীর পচে যায় শুধু পৃষ্টের হাড় পচে না। ওই হাড়ের ওপর ভিত্তি করেই সৃষ্টিকর্ম অব্যাহত থাকে। হাড়ের ওপর মাংসের আস্তরণ রাখা হয় যাতে তা গোপন এবং শক্তিশালী থাকে। এরপর তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয় তখন সে জীবন্ত মানুষে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহ তায়ালার কুদরতের কী মহিমা। তাঁর সৃষ্টি নৈপুণ্যের এক অপূর্ব নিদর্শন হলো মানুষ। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, মানুষ পৃথিবীতে অহঙ্কার করে, রক্তপাত ঘটায় ও দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি করে, যুদ্ধবিগ্রহ করে, অন্য মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন করে, সে তার অতীত ইতিহাস স্মরণ করে না। তাই মানুষকে আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্মরণ করে দিয়েছেন।
আল কুরআনে বর্ণিত মানব সৃষ্টির উপাদান : হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন;
আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাক এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন (সূরা আন-নিসা : ১)।
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এর পরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না (সূরা আম্বিয়া : ৩০)।
নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের জন্য সুশোভিত করে দিয়েছি (সূরা হিজর : ১৬)। যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন (সূরা সেজদাহ্ : ৭)।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য : আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি এ জন্য যেন তারা শুধু আমারই ইবাদত বন্দেগি করে।’ এই আয়াতে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে যে, মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টা ও পালনকর্তা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করা। আর এই বন্দেগির মাধ্যমেই মানবতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়। লেখক : ইসলামী কলামিস্ট, মজলিশপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া