চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে প্রথমবারের মতো মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে এবং বছরে দুই বার ফলন হওয়ায় এ তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ। বীজ সরবরাহ ও পরামর্শ দিয়ে চাষিদের সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। সরজমিনে ভোলাহাটে গিয়ে দেখা গেছে, ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় ভোলাহাটের ময়ামারি এলাকায় মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজের চাষ করা হচ্ছে। বাংলালিংক, ব্ল্যাককুইন, হানিডিউ, গোল্ডেন প্লামার কিং জাতের তরমুজ মাচায় ঝুলছে। পোকামাকড় আর গাছের গোড়ায় আগাছা না থাকায় বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হচ্ছে না। আগে এসব জমিতে শসা, ঝিঙেসহ অনান্য সবজি চাষ করা হতো। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এসব সবজি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। এর পরিবর্তে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন তারা। ভোলাহাটে প্রথম গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ শুরু করেন আমিরুল ইসলাম। তিনি এখন যে জমিতে তরমুজ চাষ করছেন, সেখানে আগে শসা, ঝিঙে, মিষ্টি কুমড়া চাষ করতেন। কৃষি কর্মকর্তারা তাকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেন।
আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রথমদিকে তরমুজ চাষে অনীহা থাকলেও সাহস করে জমিতে বীজ বপন করি। মালচিং পেপার থাকায় বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়নি। ভালো ফলন হওয়ায় আশানুরুপ লাভও হয়েছে। আগ্রহ করে দ্বিতীয় বারের মতো এ তরমুজের বীজ বপন করেছি। বাগানে অনেক তরমুজ ধরে আছে। আশা করছি, এবারও লাভবান হতে পারব। এসব তরমুজ বিক্রি করতে কোনো সমস্যা হয় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব তরমুজ বিক্রি করতে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না। অসময়ের তরমুজ, তাই বাজারে চাহিদা বেশি। ঢাকার পাইকাররা জমিতে এসে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আশানুরুপ দামও পাওয়া যাচ্ছে।
অল্প সময়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের ফলন হয় বলে এর চাষ শুরু করেছেন কৃষক আনসার আলী। তিনি বলেন, আগে শসাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করতাম। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ বেশি লাভজনক হওয়ায় তা চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। সবজির চেয়ে এসব তরমুজে দেড় থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। আনসার আলী আরও বলেন, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের তরমুজের বাগান গড়ার জন্য বীজ, মালচিং পেপার দিয়ে সহায়তা করছেন। তারা বাগানে আসেন, কোনো সমস্যা হলে সঠিক পরামর্শ দেন। আমার বাগানে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
আশরাফুল আলম নামের আরেক কৃষক বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে কম পরিশ্রমে বেশি লাভ পাওয়া যায়। বাজারজাত করতে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। এবার জমিতে কম করে তরমুজের বীজ লাগিয়েছিলাম, বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে তরমুজ চাষের ইচ্ছা আছে।
দুই মাসের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ পরিপক্ব হয়। এসব তরমুজ পিস হিসেবে নয়, কেজি হিসেবে বিক্রি হয়। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকরা এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ভোলাহাটে প্রায় ৫ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আলী। তিনি বলেন, কৃষকদের গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বীজ, মালচিং পেপার ও পরিচর্যা বাবদ অর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভোলাহাট উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আগামী বছর ৫০ বিঘা জমিতে এই তরমুজ চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।- রাইজিংবিডি.কম