রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন

‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের কথা না বলাটাও একটা বার্তা’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩

ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের ওয়েবিনারে বক্তারা 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাইরের প্রভাবের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ভারত। এবার নির্বাচন নিয়ে ভারত যে কিছু বলছে না এটাও একটা বার্তা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো শুভেচ্ছাবার্তা আসে নি, এমনকি তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনও পাঠায় নি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র যতো সংকুচিত হবে, ততোই এখানে চীনের প্রভাব বিস্তারের পরিধি বাড়বে। গতকাল রবিবার (০১ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশি শক্তির প্রভাব” শীর্ষক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এর বিশেষ ওয়েবিনারের মূল বক্তা, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ এমন মন্তব্য করেছেন।
আরেক আলোচক, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অফ সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো ড. শ্রীরাধা দত্ত প্রফেসর আলী রীয়াজের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভারতের কথা না বলাটাও একটা অবস্থান। নিজেরা ঠিক না থাকলে বাইরের লোক কথা বলার সুযোগ পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দিল্লিতে যে সরকারই থাকুক না কেন, তারা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে একইভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগ যা কিছুই করুক না কেন, ভারত তা সামাল দেবে বলে বাংলাদেশে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
১৮ সালের নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে পারে নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর কারণ আগেই সেখানে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল। ভারত-চীন ওই নির্বাচন মেনে নিলেও যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই ওই নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছিল। যে সরকারই আসুক বাংলাদেশ-ভারত একসাথে কাজ করতে পারবে আশাপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারত চাইবে ২০২৪ সালে এই সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় নি। অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতার পালাবাদল হয়েছে।
সংবিধানের প দশ সংশোধনী অসাংবিধানিকভাবে পাশ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যই ছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। সম্পূর্ণ বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার টিকে আছে। প্রধানমন্ত্রী চাইলেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
ভোটাধিকার হরণ এর অর্থ মানবাধিকার হরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকার কারো অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির স্পন্দনই হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। তারা বাংলাদেশ বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এগুলো হস্তক্ষেপ নয়। এগুলো তাদের মূল্যবোধভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিরই অংশ। কিন্তু, তাদের কথা না শুনে আমরা অনেককে শত্রু বানিয়েছি। জনগণ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি, কারণ জনগণও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
সম্পূর্ণভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই কমিশন একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোও এখন আর রাষ্ট্রীয় নয়। তারা সব দলীয় হয়ে গেছে, নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও প্রতিযোগিতামূলক হয় নি। সে সময় প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কী হয়েছে তা আমরা দেখেছি।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মনির হায়দারের স ালনায় ওয়েবিনারের আরেক আলোচক, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের মানুষ গণতান্ত্রিকই দেখতে চায়। আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘাটতিগুলোর কারণে বাইরের কথা শুনতে পাই। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সংকুচিত হয়ে যাবে- এমনটাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার পর যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় ঐক্যমত প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com