ঢাকা কলেজে রাতভর সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার (২ অক্টোবর) কলেজের মূল ফটকের সামনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তারা। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়মিত র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে সাধারণ ছাত্ররা। বিশেষ করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এই ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ওঠার সাহস করে না। যারা ওঠে তারাও নেতা নামীয় কিছু বড় ভাইয়ের দ্বারা দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়ে আসছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। গত বুধবার রাতে অ্যাকাডেমিক এসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এবং শহীদ ফরহাদ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদকে রুমে এনে চড়-থাপ্পর ও লাঠি দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করে ছাত্রলীগ কর্মী আল আমিন, সজিব আহমেদ, সাগর ও ইকরাম।
তারা বলেন, এ ঘটনার সংবাদ প্রচারের জেরে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দফতর সম্পাদক ওবায়দুর সাঈদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে রউফুর রহমান সোহেলসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। ঘটনা গত বুধবারের, আজ ছয় দিন পার হতে চলছে। কিন্তু
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। আমাদের প্রশ্ন তাদের হাত পা কোথায় বাঁধা, তারা এখন পর্যন্ত কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি? বক্তারা আরো বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যেই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরাই নিরাপদ নয়, যেখানে রাতভর একজন মানুষকে রুমে আটকে নির্যাতন করার পরও প্রশাসন জানে না, কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদে পড়ালেখা করতে পারে এবং কতটুকু নিরাপদে থাকে। তাই ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে আমাদের এই অবস্থান।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ৬টি দাবি জানান কলেজ প্রশাসনের কাছে। দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরহাদ ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ শহীদ ফরহাদ হলের হল সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে; মেধা ও প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকে ছাত্রাবাসে বৈধ সিট নিশ্চিত করা; গেস্টরুম বা গণরুম কালচার নিষিদ্ধ করা এবং অছাত্রদের হল থেকে বের করে ছাত্রদের সুযোগ দিতে হবে। এ সময় তারা প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে কলেজ প্রশাসন তাদের দাবিসমূহ মেনে না নিলে এবং সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।