হরতাল অবরোধের কারণে চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো। গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর (শনিবার) পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হরতাল-অবরোধের কারণে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন নগরীতে রয়েছে সুনসান নিরবতা। খালি পড়ে আছে আবাসিক হোটেল-রিসোর্টগুলোও। অন্যান্য বছর শীত মৌসুমের শুরুতে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে দেশি বিদেশি প্রচুর পর্যটক থাকলেও সরজমিনে শনিবার (১১ নভেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখা যায় সকল পর্যটন স্পটগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য। গত দুই সপ্তাহ যাবত ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারেও শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে অলস সময় পার করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বুকিং ছিল না হোটেল মোটেলের ৯৫ শতাংশ কক্ষ। অথচ শীতের মাসগুলোয় শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্পে থাকে ভরা মৌসুম। হোটেল-রিসোর্ট গুলোতে দেওয়া থাকে অগ্রিম বুকিং।
রেস্টুরেন্টগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। মৌসুমের শুরুতেই শ্রীমঙ্গল এভাবে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ায় হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। পর্যটন শিল্পে এ খরা নামার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে। দেশের এমন অস্থির সময়ে মানুষ ভ্রমণ করতে অনিচ্ছুক। তাই নানান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও পর্যটনের ভরা মৌসুমে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না-এমন মন্তব্য পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে এ খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শ্রীমঙ্গলের পর্যটন ইকো গাইড শ্যামল দেব বর্মা বলেন, বিগত বছরগুলোয় এ সময়টাতে শ্রীমঙ্গলে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। হোটেল-মোটেলে কোনো সিট ফাঁকা থাকে না। বিশেষ করে প্রতি বছর এ সময় দেশ-বিদেশের নানা বয়সী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। কিন্তু টানা অবরোধ-হরতালের কারণে এবছর শীত মৌসুমের শুরুতে এসব স্পটে এখন পর্যটকদের দেখা মিলছে না। শ্রীমঙ্গল ভ্রমণের জন্য যারা আগাম বুকিং দিয়েছিলেন তাও তারা বাতিল করেছেন। এতে ট্যুর অপারেটর ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলের রাধানগর এলাকায় অবস্থিত নিসর্গ নিরব ইকো কটেজের সত্ত্বাধিকারী কাজী শামসুল হক বলেন, এখন শীত মৌসুম শুরু। বছরের এ সময় প্রচুর পর্যটক থাকে। কিন্তু অবরোধ-হরতালের কারণে পর্যটক নেই বললেই চলে। আর পর্যটক শুন্য থাকায় আমাদের রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ক্ষতির মুখে। কারণ পর্যটক না এলেও হোটেলের নিয়মিত খরচ বহন করতে হচ্ছে। এ সংকট চলতে থাকলে আমরা অচিরেই পথে বসে যাবো। হরতাল অবরোধের কারণে অনেকেই ট্যুর বাতিল করেছেন; এতে আগাম বরাদ্দ হওয়া কক্ষ বাতিল হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ বলেন, দুর্গাপূজার শুরু থেকেই শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্প বেশ জমে ওঠেছিল। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারণে চলতি বছরের শুরুতেই আমরা বিশাল আর্থিক লোকসানের মুখোমুখি হলাম। হরতাল অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলমান থাকলে আমরা কর্মীদের ছাঁটাই করতে হবে। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে রিসোর্ট চালাতে থাকলে আমাদের পর্যটন শিল্পে ধস নেমে আসবে। বিশাল আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে না পারলে আমরা পথে বসে যাবো। কাজেই এ পর্যটন শিল্পের লোকসান পুষিয়ে ওঠতে আমরা সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি করছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ মৌলভীবাজার জোনের পুলিশ উপ-পরিদর্শক প্রবাল সিনহা বলেন, চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে গত দুই সপ্তাহ ধরে তেমন কোনো পর্যটকের সমাগম ছিলনা। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রস্তুত রয়েছে শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশ।