বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় (১৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্নচাপটি গতকাল (১৬ নভেম্বর) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। যা আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে নির্দেশনা দিয়েছে অধিদফতর।
রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে নিম্নচাপ, শুক্রবার উপকূলে আঘাতের শঙ্কা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার শেষ রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এটি শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর নাগাদ গভীর নি¤œচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১১টি জেলায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলাগুলো হলো-বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রাম।
গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৬৪ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
গভীর নিম্নচাপটি এখন মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এগিয়ে যাওয়ার গতি বিশ্লেষণ করে আমরা আশা করছি, এটি ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আজ (শুক্রবার) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত আনতে পারে। এর আগে সভায় জানানো হয়, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মাঝামাঝি পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলের কাছ দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র বা চোখটি অতিক্রম করতে পারে।
গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে মিধিলি। নামটি মালদ্বীপের দেওয়া বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন পূর্ণিমা নেই। ? বাতাসের গতিবেগ কম, তাই এখানে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা অনেক কম।
রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে নিম্নচাপ, শুক্রবার উপকূলে আঘাতের শঙ্কা
লঘুচাপের পর এটি এত দ্রুত গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড় পরিণত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে, এটি আমরা সচরাচর দেখি না। এ মিটিংটি আমরা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর করি, কিন্তু আমরা এটি আগেই করলাম। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামীকাল দুপুর ১২টার আগেই যাতে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে পারি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবহাওয়া দপ্তর থেকে যখনই বিপৎসংকেত দেওেয়া হবে, ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হবে, তখনই যেন দ্রুততার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে যাওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দেব-তারা যাতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখেন। আশ্রয় কেন্দ্রে যাতে খাবার এবং নিরাপদ খাবার পানি রাখেন। তিনি বলেন, গত মাসে ঘূর্ণিঝড় হামুনের সময় বরাদ্দ দেওয়া চাল, শুকনা খাবার, গোখাদ্য, শিশু খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলাম। আশা করছি সে অর্থ মজুত আছে। সেগুলো আপনারা ব্যবহার করবেন, খরচ করবেন। আরও যদি কিছু প্রয়োজন হয়, আমাদের জানাবেন আমরা সাথে সাথেই ব্যবস্থা করে দেব। এ নভেম্বর মাসে ভয়াবহ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়? বাংলাদেশ আঘাত হেনেছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি মাথায় রাখবো। নভেম্বর মাসে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আসছে। গুরুত্বসহকারে নেবো এবং সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে প্রত্যেক মানুষ, গবাদি পশুর জীবন রক্ষা করার জন্য আমরা কাজ করে যাব। কত সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে-জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সঠিক সংখ্যাটা বলা কঠিন। যেহেতু এটি ক্যাটাগরি-১ ঘূর্ণিঝড় তাই ঝুঁকির পরিমাণ কম।? তাই আমরা একেবারে উপকূলবর্তী যারা বাস করে তাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করব।