রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

কোটি টাকা মূল্যের সড়কের গাছ নামমাত্র দামে নিলামে বিক্রয়ের অভিযোগ

আমিনুর রহমান বাবুল (পাটগ্রাম) লালমনিরহাট
  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৩

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে কোটি টাকা মূল্যের সড়কের দু’পাশের গাছ নামমাত্র মুল্যে নিলামে বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। এসব গাছ সুবিধাভোগীদের অন্ধকারে রেখে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বিক্রি করে দেয়ায় তাদের ন্যয্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বনবিভাগের দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ফায়দা লুটছে একটি মহল। জানা গেছে, বন বিভাগের ফরেস্ট্রী সেক্টর প্রকল্পের আওতায় ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের ললিতারহাট সড়ক, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সাপ্পারবাড়ী সড়ক এবং পাটগ্রাম ইউনিয়নের ডাওয়াইপাড়া আঞ্চলিক সড়কে গাছের চারা রোপন করা হয়। ওই সময় বৃক্ষরোপন কর্মসূচীতে ভূমিহীন, দরিদ্র, কৃষি শ্রমিকদের এ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্য নির্বাচিত করে বনবিভাগ। এসব গাছের চারা দেখভাল করা ও মেয়াদ শেষে বিক্রয়ের ব্যাপারে সদস্যদের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে সরকারের বন অধিদপ্তরের পক্ষে রংপুর বিভাগীয় সামাজিক বনবিভাগ। খোদ এ প্রকল্পের সদস্যরাই সড়কের এসব গাছ ন্যায্য মূল্যে হতে বঞ্চিতের অভিযোগ করেছেন। জেলা ও উপজেলার বনবিভাগের কর্মকর্তারা গাছ গুলোর দাম নির্ধারণ যথোপযুক্তভাবে করেনি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। গাছ গুলোর দর যাচাই, চিহিৃত করা কোনোকিছুতেই স্থানীয় সদস্যদের রাখা হয়নি। একাধিক উপকারভোগী সদস্য জানান, বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় এক হাজার ৫ শ টি গাছ প্রায় ৭৩ লাখ টাকা দামে গত ২-৩ মাস আগে নিলামে বিক্রয় করা হয়। ৫৩ টি লট ভিত্তিক বিক্রয়কৃত গাছ গুলোর বাজার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মধ্যে ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, শিলকড়ই, শ্বেতকড়াই, রেইন্ট্রি, অর্জুন, মিনজিরি, গামার, কৃষ্ণচূড়া, চম্পাফুল, জলপাই, রক্তচন্দন, বকাইন, শিশু, জারুল প্রভৃতি। গাছ নিলামে কিনেছেন নীলফামারী জেলার জলঢাকার আইনুল হক। সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছ কাটায় নিয়োজিত নিলামে ক্রেতার লোকজনেরা দিনব্যাপী গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কম দামে গাছ কেনার ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তাদের কেউ রাজি হননি। চুক্তি অনুযায়ী গাছ রোপনের ১০ বছর পর জেলা, উপজেলার বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, অংশীজন সদস্য ও আঞ্চলিক কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে দর কষাকষি পূবর্ক বাজার দর নির্ধারণ করে নিলামে বিক্রয় করবেন বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগ। বিক্রয়ের অর্থ বন অধিদপ্তর ১০%, ভূমির মালিকানা বা দখলী স্বত্বাধিকারী সংস্থা ২০%, উপকারভোগী সদস্য ৫৫%, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ৫% ও বৃক্ষ রোপন তহবিল ১০% হারে বন্টন করার নিয়ম। ললিতারহাট সড়ক এলাকার স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপকারকারভোগী সদস্য ইয়াছিন আলী বলেন, ‘অনেক গাছ আছে যার একেকটার দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা হবে। গাছ গুলোর ন্যায্য মূল্য আমরা পাইনি।’ একই এলাকার ফরেস্ট্রি প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, ‘নিলামের ব্যাপারে কেউ কিছু আমাদেরকে জানায়নি। গাছের মূল্য সঠিক হয়নি। ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দরের বহু গাছ আছে। গাছ গুলোর নিলামে ক্রেতা আইনুল হক বলেন, ‘আমি তো একাই গাছ গুলো নেইনি। ১১ টি জায়গায় দরপত্র বিক্রয় হয়েছে। সরকারি দরের উপরে হলে নিলামে বিক্রি দেয়। প্রতিযোগীতা করে সরকারি দরের উপরে দর দিয়ে নেয়া হয়েছে।’ লালমনিরহাট জেলা ফরেস্টার (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান বলেন, ‘গাছ গুলোর লাগানোর চুক্তিপত্র অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। সরকারি জিনিস বিক্রি হলে সরকারি নিয়মই হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এসব তথ্য আপনাকে দিতে পারি না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি আনেন, আমি সব তথ্য দিব।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com