দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের মোট প্রার্থী ৯২ দশমিক ৮৩ শতাংশই কোটিপতি। ক্ষমতাসীন দলটির ২৬৫ প্রার্থীর বার্ষিক গড় আয় ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গড় সম্পদমূল্য সাড়ে ২৮ কোটি টাকার বেশি। দলটির প্রার্থীদের ১৭০ জনই (৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ) পেশায় ব্যবসায়ী। গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পেয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠি জড়িত। ২০০৮ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে, যে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল, সেখানে প্রার্থীদের মধ্যে আয়বৈষম্য কম ছিল। একতরফা নির্বাচনে এই বৈষম্য বেড়ে যায়। কারণ, এসব নির্বাচনে যেনতেন প্রার্থী দিলেও জিততে সমস্যা হয় না।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নানা বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। স্বতন্ত্রসহ মোট প্রার্থী ১ হাজার ৯৪৫ জন। এর মধ্যে ১৪ জন ২টি করে এবং একজন ৩টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন। সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১ হাজার ৯৪৫ জনের মোট বার্ষিক আয় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। মোট সম্পদমূল্য ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি আয় ও সম্পদ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। এরপর আয় ও সম্পদ বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। সুজনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের প্রায় ৫৯ শতাংশের পেশা ব্যবসা। আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জন (৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ) পেশায় ব্যবসায়ী। জাতীয় পার্টির ২৬২ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৩ জন (৬৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ) ব্যবসায়ী। ৪৩৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ী ৩০২ জন (৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ)। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন প্রায় ৫২ শতাংশ। সুজনের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের প্রার্থীদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পাস ৩২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। স্নাতক পাস প্রার্থী ২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৯১৫ জন (৪৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) আয়কর দেন। এর মধ্যে লাখ টাকার ওপরে আয়কর দেন ৩৫২ জন।
সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যকলাপে মগের মুল্লুকও লজ্জা পাবে। এই নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম স্বতন্ত্র লীগের। নির্বাচনে জিতলে অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন। ফলে আগামী সংসদে ২৮০ জনই সরকারি দলের হলে আশ্চর্য হব না। গণতন্ত্রের যে ‘গ’ আছে, সেটাও আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে থাকবে না। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন। তিনি বলেন, ‘জনগণ এখন সংসদ থেকে কিছু আশা করে না। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তো জিতেই গেল। তবে এই নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। টানেলের শেষে নিশ্চয়ই আলো আসবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন হবে, এই আশা করি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের আগেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্যের সঠিকতা যাচাই ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের ফলাফল বাতিল করা; যেসব প্রার্থীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ আগের আয় ও সম্পদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা সন্দেহজনক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তাঁদের তথ্যের সঠিকতা যাচাই ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের ফলাফল বাতিল করা; হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনা; বিশেষ করে সম্পদের তথ্য ছকে পরিবর্তন আনা। এ ক্ষেত্রে অস্থাবর ও স্থাবর মূল্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা এবং বর্তমান বাজারমূল্য উল্লেখের বিধান করা।