শেষ পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। এবার শুরু থেকে মেলার স্থান নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। সেসব কাটিয়ে বেশ জোরশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা একাডেমি। স্টল নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে স্টল। বইমেলা ঘিরে প্রস্তুত প্রকাশনীগুলোও। দিন-রাত কাজ করছেন তারা। ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা উদ্বোধন করবেন। সেদিনই পর্দা উঠবে বইমেলার। এবছর বইমেলা পূর্বাচলে হবে বলে শোনা যাচ্ছিল। তবে শেষমেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত বছর নানা সমালোচনা থাকায় এবছর বইমেলা সম্পন্ন করতে যথাযথ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। মেলার পরিসর বাড়ায় বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে কাঠামোসহ মেলার প্রায় সব কাজ সম্পন্ন হতো। বিগত বছরগুলোতে তাদের বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলা বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে বলে জানিয়েছে বইমেলা কমিটি। করোনার পর থেকে মেলা কিছুটা এলোমেলো ছিল। সম্প্রতি সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বর ঘুরে দেখা যায়, স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মীরা। একাডেমির নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ম্যাপ মেনে স্টল নির্মাণ চলছে। এছাড়া তথ্যকেন্দ্র, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডাসহ বিভিন্ন মঞ্চ ও বইমেলার মিডিয়া সেন্টার নির্মাণের কাজও চলছে।
বাংলা একাডেমি জানায়, পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এবছর প্রায় ৭০টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিল। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি প্রকাশনাকে বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরেরগুলো অপরিবর্তিত থাকছে। সব যাচাই-বাছাই শেষ হলে বইমেলায় কতগুলো স্টল থাকছে তা ২৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে। এবছর নতুন করে বাংলা একাডেমি থেকে ঢাকার ২৫টি স্কুলের শিক্ষকদের তাদের শিক্ষার্থীদের বইমেলায় আনার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এবার মেট্রোরেলও চালু থাকবে রাত পর্যন্ত। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার পর থেকে মেলা কিছুটা এলোমেলো ছিল। এবার বাংলা একাডেমি সম্পূর্ণ তদারকি করবে। আমাদের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতিটি প্রকাশনা ব্যস্ত।’
বইয়ের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামল পাল বলেন, ‘কাগজের দাম স্থিতিশীল থাকায় এবছর আশাকরি বইয়ের দাম বাড়বে না। বইয়ের মূল্য গত বছরের মতোই থাকবে। তবে এবার নির্বাচনের বছর, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও তেমন একটা ভালো না। বই তো অপরিহার্য কোনো জিনিস না যে কিনতেই হবে, এক্ষেত্রে যাদের হাতে টাকা থাকবে তারাই কিনবে। মেলা শুরু হলে বোঝা যাবে পাঠকরা আসলে কীভাবে দেখেন। দাম নিয়ে পাঠকরা অভিযোগ করবে না আশা করি।’
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ সব ধরনের বই প্রকাশিত হয়। এবছর প্রায় ১০০টি নতুন বই মেলায় আনবো। বাংলা একাডেমিও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে।’ কিংবদন্তী পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী অঞ্জন হাসান পবন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার নির্বাচনের জন্য কাজ স্থবির ছিল। এখন শেষ সময়ে এসে খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে। ২৩ তারিখ লটারি হবে, এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে কাজ শেষ করবো সে চিন্তায় আছি। আমদের এবার জল্লাদ শাহাজাহানের আত্মজীবনী ‘কেমন ছিল জল্লাদ জীবন’ ও জনপ্রিয় শিল্পী তানযীর তুহিনের ‘আহত কিছু গল্প’সহ মোট ৩০টি নতুন বই মেলায় আসবে।’
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার শুধু মেলার পূর্বপ্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা সাতটি কোর কমিটি করেছি। এই কমিটি ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত মেলায় অনেক অভিযোগ ছিল। একটা প্রকাশনী নিয়ে অনেক অস্থিরতা ছিল, এবার সেটি নেই। তাই আমরা গত বছরের মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছি। এবার আমরা পুস্তক সমিতি থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে নিয়ে বইমেলার একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘মেলায় প্রতি বছর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে অনেক অভিযোগ আসে, বিশেষ করে টাকার বিষয়ে। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিল পাওয়া যায় না। তাই এবার আমরা নিজেরাই সব তদারকি করছি।’ মেলার অবকাঠামোগত বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোগত বিন্যাস আগের মতোই আছে। একটা গলির সামনে দাঁড়ালে এর শেষ মাথা দেখা যাবে। গুচ্ছ আকারে থাকবে না। প্যাভিলিয়ন ও স্টলের লাইন আলাদা থাকবে, যাতে স্টল খুঁজে পেতে সহজ হয়।’
১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এরপর নানা রূপ-রূপান্তরের মাধ্যমে অমর একুশে বইমেলা আজ বাঙালির আরাধ্য মেলায় পরিণত হয়েছে।