কুড়িগ্রামে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের সাড়ে ৩ একর জমি লীজ নিয়ে ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমির উদ্যোগে ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দিনের স্মরণে ওই একাডেমি মাঠে ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট উদ্বোধন করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ানুল হক দুলাল। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা: এস.এম আমিনুল ইসলাম। আরো বক্তব্য রাখেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি ও টুর্ণামেন্ট কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, জেলা ক্রীড়া অফিসার আকরাম হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক সফি খান, কুড়িগ্রাম ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি জালাল হোসেন লাইজু, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সূর্য, প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা লাকু প্রমুখ। টুর্নামেন্টে ৪টি ক্লাব অংশগ্রহন করছে। উদ্বোধনী খেলায় প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমি ও সৃজন স্মৃতি ক্রিকেট একাডেমি অংশগ্রহন করে। কুড়িগ্রামের কৃতি ক্রিকেটার নাজমুল হুদা লাকু ঢাকায় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট খেলার সময় আহত হওয়ার পর কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলার। সেই লক্ষ্যে অনেক খোঁঝাখুজির পর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে ধরলা নদী তীরবর্তী পাঙ্গারচরে প্রায় সাড়ে ৭লাখ টাকায় ৩ দশমিক ৫ একর জমি লীজ নিয়ে সেখানে ক্রিকেট একাডেমির কার্যক্রম শুরু করেন। এই একাডেমি গড়ে তুলতে পরিবারসহ নিজের জমানো ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করেন তিনি। উদ্বোধনী খেলায় প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমি ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে সৃজন স্মৃতি ক্রিকেট একাডেমি সবকটি উইকেট হারিয়ে ১০৩ রানে আটকে রেখে ৩৩ রানে বিজয়ী হয় প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমি। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করে সৌরভ। দলের অপর বোলার মারুভ ৪ ওভারে ৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেয়। প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা লাকু জানান, ঢাকায় খেলতে গিয়ে কবজিতে আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে ছিটকে যাই। কিন্তু ক্রিকেট আমার রক্তে। তাই কুড়িগ্রামে ফিরে এসে স্টেডিয়ামে যুক্ত হই। কিন্তু সেখানে নানান ইভেন্ট থাকায় আলাদা কোন মাঠের প্রয়োজন অনুভব করি। সে লক্ষে প্রথমে বাড়ীতে একাডেমির কাজ শুরু করি। বয়সভিত্তিক খেলায় ফলাফলও ভালো হতে থাকে। পরে সঞ্চিত অর্থ ও বাবা এবং ভাইয়ের সহযোগিতা নিয়ে সদর উপজেলার পাঙ্গার চরে ধরলা নদীর তীর ঘেঁষে উঁচু এলাকা খুঁজে পাই। পরে গ্রামবাসীকে আমার স্বপ্নের কথা বলি। তারাই আগ্রহ হয়ে আমাকে সাড়ে ৩ একর জমি ৫ বছরের জন্য লীজ প্রদান করেন। এভাবে প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমির কার্যক্রম শুরু করি। আমার স্বপ্ন একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলার। টুর্নামেন্ট কমিটির আহবায়ক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, লাকু ক্রিকেট পাগল ছেলে। জেলার বয়সভিত্তিক খেলোয়াড় সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। একাডেমিটিকে বড় করতে হলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বৃত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিক সফি থান বলেন, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধূলার প্রয়োজন রয়েছে। এটা বাবা-মাকে বুঝতে হবে। এই মাঠে আসার মাঝখানে ধরলা নদীর ছোট শাখাটি যদি বন্ধ করা যায় তাহলে এই ক্রিকেট একাডেমিতে আসতে কোন বিড়ম্বণায় পরতে হবে না। জেলা ক্রীড়া অফিসার আকরাম হোসেন জানান, মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে গেলে আমাদেরকে খেলাধূলায় পৃষ্ঠপোষকতা করা জরুরী। এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্রাধারণ সম্পাদক রেদওয়ানুল হক দুলাল জানান, ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলা অনেক কঠিন কাজ। সেই কাজ শুরু করেছে লাকু। আমাদের উচিৎ লাকুর পাশে দাঁড়ানো। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও সব পর্যায়ের লোকজনকে এই কাজে এগিয়ে আসা দরকার। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক সিভিল সার্জন ডা: আমিনুল ইসলাম জানান, এই মাঠে আসার জন্য একটি সুন্দর রাস্তা দরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।