সম্প্রতি মার্কিন সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির পক্ষ থেকে এমকিউ-৯বি প্রিডেটর চুক্তিতে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ভারত মোট ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন কিনবে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে। তবে এই ‘সবুজ সংকেত’ নাকি এত দিন আকটে ছিল খালিস্তানি উগ্রবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের কারণে! জানা গেছে, মার্কিন সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির বাকি সব সদস্যই প্রিডেটর ড্রোন বিক্রি চুক্তির পক্ষে মত প্রকাশ করলেও এত দিন ধরে ‘হ্যাঁ’ বলতে দেরি করছিলেন কমিটির প্রধান বেন কার্ডিন। তবে সম্প্রতি তিনি এই চুক্তিতে সবুজ সংকেত দেন। তবে বাইডেন প্রশাসনের সাথে দীর্ঘ দর কষাকষির পর নাকি ওই চুক্তিতে সবুজ সংকেত দেন তিনি।
মেরিল্যান্ডের ওই সিনেটর জানান, সাম্প্রতিককালে মার্কিন নাগরিক পান্নুনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই খুন করার ছক কষার ঘটনায় ভারতীয় আধিকারিকদের হাত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার যাতে পূর্ণ সহযোগিতা করে, এই শর্তেই তিনি ড্রোন বিক্রির চুক্তিতে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এই আবহে মার্কিন কংগ্রেসকে এই চুক্তির সবুজ সংকেত পাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন করে আপত্তি না উঠলে আগামী ৩০ দিন পর এই চুক্তির সামনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সির তরফ থেকে জারি করা নোটিফিকেশন অনুযায়ী এমকিউ-৯বি প্রিডেটর ড্রোন ছাড়াও আরো কিছু সামরিক সরঞ্জাম আমেরিকা থেকে কেনার আবেদন করেছিল ভারত। সব মিলিয়ে মোট ৩.৯৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে চেয়েছিল ভারত। সব সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রেই অনুমোদন দেয়া হয়েছে সিনেট কমিটির তরফ থেকে।
এই প্রিডেটর ড্রোনগুলো হাতে পেলে ভারতের সামরিক শক্তি আরো বাড়বে। গতবছর ৩১টি সশস্ত্র এমকিউ-৯বি ড্রোন কেনার জন্য চুক্তি হয়েছিল ভারত ও আমেরিকার। এর মধ্যে প্রথম দফায় ভারত পাবে ১০টি অত্যাধুনিক ড্রোন। তবে সেই ড্রোনগুলোর সাথে অস্ত্র আসবে না। যদিও এই ড্রোনগুলো অস্ত্র বহনে সক্ষম থাকবে। জানা গেছে, দ্বিতীয় দফা থেকে ভারত সশস্ত্র ড্রোন পেতে শুরু করবে ভারত।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ জুনই এই ড্রোন কেনার জন্য অনুমোদন দিয়েছিল ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমেরিকা সফরকালে এই চুক্তির ওপর শিলমোহর পড়ে। তবে মার্কিন সিনেট কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় এই চুক্তি কার্যকর করা যায়নি। রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, প্রথম দফায় পাওয়া ১০টি এমকিউ-৯বি ড্রোনের মধ্যে একটি ড্রোনকে দক্ষিণ ভারতে মোতায়েন করা হবে। এদিকে দু’টি ড্রোনকে চীন সীমান্তের ওপর নজরদারির জন্য মোতায়েন করা হবে বলে জানা গেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকা থেকে ১৫টি সি গার্ডিয়ান ড্রোন এবং ১৬টি স্কাই গার্ডিয়ান ড্রোন কিনছে ভারত। সি গার্ডিয়ান ড্রোনগুলো সমুদ্রের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হবে। এদিকে স্কাই গার্ডিয়ানগুলো ভূভাগের ওপর আকাশ থেকে নজরদারির জন্য কাজে লাগানো হবে।
এদিকে গত মাসেই প্রাগ হাই কোর্ট রায় দেয় চেক প্রজাতন্ত্র থেকে নিখিল গুপ্তাকে আমেরিকায় পাঠানো যাবে। উল্লেখ্য, খালিস্তানি উগ্রবাদী গুরপতবন্ত সিং মানকে হত্যার ছকের মামলায় অভিযুক্ত হলেন এই নিখিল। প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চেক জেলে বন্দি তিনি। এই নিখিলের বিরুদ্ধে আমেরিকায় মামলা করা হয়েছে। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই আমেরিকা নিখিলকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়ে বিচার সম্পন্ন করতে চায়। তার বিরুদ্ধে ‘খুনের জন্য বরাত দেয়ার’ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে আমেরিকার আদালতে। ভারত সরকারের এক এজেন্সির কর্মকর্তার নির্দেশেই নাকি নিখিল এই কাজ করেন। এই আবহে গত ২০২৩ সালের ৩০ জুন চেক প্রজাতন্ত্র থেকে নিখিলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
অ্যাটর্নি অফিসের তরফে দাবি করা হয়, খালিস্তানি উগ্রবাদীকে হত্যার জন্য এক লাখ মার্কিন ডলারের রফা হয়েছিল। অগ্রিম বাবদ ‘আততায়ী’-কে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হয়। তবে ওই ‘আততায়ী’ আদতে মার্কিন প্রশাসনেরই ‘আন্ডার কভার এজেন্ট’ ছিল। এরপরই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয় মার্কিন প্রশাসন। পরে ওয়াশিংটনের অনুরোধে চেক প্রজাতন্ত্র গ্রেফতার করেছিল নিখিলকে। এই নিয়ে সিআইএ প্রধান বিল বার্নসকে ভারতে এসে রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের প্রধান রবি সিনহার কথা হয়েছিল। আলোচনা হয়েছিল মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান এবং ভারতের জাতীয় নিরপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালেরও। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস