প্রাচীন যুগের স্থাপিত ররিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী শ্রী শ্রী তারা মায়ের মন্দির আজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ভক্ত পূন্যার্থীদের কাছে উপ-মহাদেশের বৃহত মনোমুগ্ধকর ও শৈল্পিক স্থাপনার এক দর্শনীয় অন্যত্বম তীর্থস্থান। বার্থী শ্রী শ্রী তারা মায়ের মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে দেখা যাবে মন্দিরের সৌন্দর্য ও পূন্যার্থীদের এ যেন এক মিলনমেলা। মন্দিরের পূজারী-পুরোহিত ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় যে প্রাচীন যুগে এই তারা মায়ের মন্দির নির্মাণ করা হলেও আজ রূপ পেয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য। মন্দির ট্রাস্টি কমিটি ও পুজা উদযাপন কমিটির সদস্যবৃন্দের পরিচালনায় প্রতিদিন মায়ের পূজার্চনার পাশাপাশি সকাল থেকে ও সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর-দূরান্ত, দেশ-বিদেশের ভক্ত-পূণ্যার্থীদের আগমন ঘটে মন্দির প্রাঙ্গনে। তারা মায়ের মন্দিরে মঙ্গল ও শনিবার পূজা শেষে সকল পূজারী ভক্তদের জন্য প্রসাদের আয়োজন করে থাকে কমিটির সংশ্লিষ্ট সকলে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার বার্থী বাসস্ট্যান্ডে দেখা যাবে নব নির্মিত দৃষ্টি নন্দন বার্থী শ্রী শ্রী তারা মায়ের মন্দির। মন্দির সম্মুখে রয়েছে ভক্ত পূন্যার্থীদের বিশ্রাম নেয়ার জন্য রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ শান্তিলতা পোদ্দার অঙ্গন। মন্দিরের উত্তর পাশে রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট নবদ্বীপ পোদ্দার ভবন, যার নিচ তলায় রয়েছে অফিস রুম, দোতালায় রয়েছে পুরোহিতদের থাকার ব্যবস্থা ও তিনতলায় দুর -দুরন্ত থেকে আগত ভক্ত পূন্যার্থীদের রেস্ট হাউজ। প্রতিবছর ফাগুন কিংবা চৈত্র মাসে বাৎসরিক শ্রী শ্রী তারা মায়ের পুজো ও দীপাবলিতে মায়ের পূজা, শারদীয় দুর্গা পুজা , বাৎসরিক মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের পুরোহিত অজয় মৈত্র জানান আগামী ১১ মার্চ ২০২৩খ্রিস্টাব্দ ২৬ শে ফাল্গুন ১৪২৯ বঙ্গাব্দ শনিবার প্রাচীন ও মহিমান্বিত বার্থী শ্রী শ্রী তারা মায়ের বাৎসরিক এ বছরের পূজা উপলক্ষে দিন-রাত্র ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও শ্রী শ্রী তারা মায়ের পূজার পাশাপাশি নারায়ণ, রক্ষাচন্ডী পূজা, শনি দেবের পুজা, শীতলা মায়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের সিরি বেয়ে উপরে উঠলে চোখে পরে আদ্য শক্তি জগৎ মায়ের রুপ, মন ভরে যাবে মায়ের রূপ দর্শনে। ২০১৪ইং সনের মায়ের মন্দিরে পাথরের নতুন বিগ্রোহ পূর্ণ প্রতিষ্ঠায় উদ্বোধন করা হয়। মন্দির পরিচালনা কমিটির কাছ থেকে যতদূর সম্ভব জানা যায় সৃষ্টি থেকে মায়ের পূজা স্থানীয় ও দূর- দূরান্তের আগত ভক্তদের অনুদান দিয়ে পরিচালিত হয় । দেশ-বিদেশের হাজার-হাজার ভক্ত প্রতিদিন মায়ের মন্দিরে এসে তাদের মানত করে যানএবং উপকৃত হয়ে মানত পূজা দিতে আসেন। ১৯৬৯ সনে ভগবান চক্রবর্তী সভাপতি ও সুধাংশু কুমার চৌধুরীকে সম্পাদক করে একটি কমিটি করে, ওই কমিটির পর একেক সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সমাজের বিশিষ্টজনদের নিয়ে কমিটি চলে আসছিলো। ভূপতি কান্ত বক্সি ও তার পূর্বপুরুষের দেয়া এই ভূমিতে আজ প্রতিষ্ঠিত বার্থী শ্রী শ্রী তারা মায়ের মন্দির। মায়ের ভক্ত পূণ্যার্থীদের কাছে শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশির মধ্যে মনোমুগ্ধকর ও দর্শনীয় তীর্থস্থান করে তুলছে তারা মায়ের মন্দির। ইতিহাসের আলোকে বিস্তারিত জানা না গেলেও জানা যায় যে বার্থী এলাকার প্রখ্যাত জমিদার ভূপতি কান্ত বক্সির পূর্ব পুরুষ নাকি বার্থী তারা মায়ের মন্দির কোন এক কালে প্রতিষ্ঠা করছেন বলে জনশ্রুতি আছে। প্রমাণ স্বরূপ দেখা যায় যে সিএস ও আরএস রেকর্ডে তারা মায়ের মন্দিরটি উক্ত জমিদারি আমলে প্রতিষ্ঠিত। এ থেকে ধারণা করা হয় যে প্রখ্যাত জমিদার ভূপতি কান্ত বক্সির পূর্বপুরুষ গন হয়তোবা এই আমাদের বার্থী মন্দিরের ভূমিদাতা। ১০-১০-২০১৫ইং তারিখে ভারত থেকে আগত ভূপতি কান্ত বক্সির উত্তরসূরী তপুজ্যোতি বক্সী এই মায়ের মন্দির দর্শণের জন্য বাংলাদেশে আসেন তখন তার কাছ থেকেও এর কোন উত্তর পাওয়া যায় নাই। ভক্তদের মুখে মুখে প্রচলিত আছে যে মন্দিরের পাশে মহাসড়কে শাখারের কাছ থেকে মা নিজের হাতে শাখা পরেন। জানা যায় যে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেদিন পাক হানাদার বাহিনীরা গাড়ীর বহর নিয়ে দক্ষিণ বাংলার প্রথম প্রবেশ করেন তখন মন্দিরের দৈনন্দিন পুজো চলছিলো । মন্দির দেখে পাক-সেনারা গাড়ী থেকে নেমে পুজারত অবস্থায় তৎকালীন পুজারী শশীকান্ত ভট্টাচার্য ও পূজা সাহায্য কারী সুবোধকে গুলি করে মেরে গেলে কিছু পথ যাওযার পর তারা মুক্তিসেনাদের আক্রমণে পড়ে এবং যে সৈনিক মন্দিরে গুলি করে সেই সৈনিক মুক্তিসেনাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। মায়ের মন্দিরের উত্তর পাশের এই বহেরা গাছটির বিভিন্ন ধরনের জনশ্রুতি আছে। অরো অনেক জনশ্রুতি রয়েছে মায়ের প্রাচীন এই মন্দিরের ইতিহাসে——-। মায়ের বিভিন্ন রূপে ও মায়ের তাকিয়ে থাকা দৃশ্য দেখে হয়তো শিল্পী তার কন্ঠে গেয়ে উঠেছেন কে বলেছে মা আমার কালো মা-যে আমার বিশ্ব জুড়ে জ্বালিয়ে দেয় জ্ঞানের আলো, আলো। ভুবনো মোহিনী মাগো তুমি তারা মা -। মাগো আনন্দময়ী নিরানন্দ করো না।