রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

জাদুকরের নাম শেন ওয়ার্ন

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪

শতাধিক বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে কতো তারকাদের দেখা মিলেছে, কতো তারকা-মহা তারকা এসেছেন, নাম লিখেছেন সোনালী কালিতে। তবে একজন শেন ওয়ার্ন যেন সবার থেকে ভিন্ন। ক্রিকেট খেলতেন, অথচ ‘জাদুকর’ ছিল খ্যাতি। এমনিই এমনিই তো ওই স্বীকৃতি জুটেনি!
ক্রিকেটের এক বিস্ময় ছিলেন ওয়ার্ন। সবার শেষ যেখানে, সেখান থেকেই যেন তার শুরু। বল যেন ছিল তার পোষ্য, যেন তার কথা শুনতো। যখন যেভাবে বলতেন সেভাবেই যেন প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতেন। সব মিলিয়ে ওয়ার্ন ছিলেন এক অদ্ভুতুড়ে রহস্য। যে রহস্যের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেননি তাৎকালীন বাঘা বাঘা ব্যাটাররাও। ওয়ার্ন নিজেকে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছেন যে- ওয়ার্ন যুগের পর থেকে যত লেগস্পিনার আসবে ক্রিকেটে, সবাইকে মাপা হচ্ছে/হবে ওয়ার্নের মাপকাঠিতে। কেন না এই ওয়ার্নের হাত ধরেই পুর্নজন্ম হয়েছে লেগ স্পিন শিল্পের। আধুনিক ক্রিকেটে যে লেগ স্পিনের এতো চাহিদা, তার পেছনের কারণটা ওয়ার্ন।
নব্বইয়ের দশকে ওয়ার্ন আসার আগে সারাবিশ্বেই চলছিল পেস বোলিংয়ে বিপ্লব। ক্যারিবীয় পেসারদের দেখে তখন সব তরুণই পেসার হতে চেয়েছে। ফ্লেমিং, ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে শুরু করে শ্রীনাথ, শোয়েব আখতার কিংবা ড্যারেন গফ, অ্যান্ডি ক্যাডিক, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস; ইতিহাসের সেরা পেসারদের রাজত্বই চলছিল তখন। সেই আগ্রাসনের দিনে লেগস্পিনের মতো সহজ বিষয়ে বিশ্বকে বিমোহিত করেছিলেন ওয়ার্ন। আজকের দিনে লেগস্পিনের এমন জয়জয়কার, সে তো ওই ওয়ার্নের হাত ধরেই। রাশিদরা মুগ্ধতা ছড়িয়ে চললেও তার মতো করে আর কেউ আসেনি। শেন কিথ ওয়ার্ন নামটা যেন লেগস্পিনেরই এক সমার্থক।
অথচ তার শুরুটা ছিল সাদাসিধে। অভিষেক টেস্টে পেয়েছিলেন মোটে ১ উইকেট। আর প্রথম সাত ইনিংস বল করে ৪৫১ রান দিয়ে উইকেট পেয়েছিলেন হাতেগোনা ৫টি। তবে অষ্টম ইনিংসে এসে জানান দেন নিজের সক্ষমতার। আভাস দেন দারুণ কিছুর। সেবার ৫২ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। এমন শুরুর পর যখন শেষ করলেন, নামে পাশে তখন সাদা পোষাকে ৭০৮ উইকেট। যেখানে এখন পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে কেবল মুত্তিয়া মুরালিধরনের, ৮০০। আর ওয়ানডে মিলিয়ে সেই উইকেট সংখ্যা যায় হাজার ছাপিয়ে, ১০০১টি। এখানেও মুরালি এগিয়ে থাকলেও, ওয়ার্নকে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ খেলতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পাটা পিচে। অন্যথায় কি হতো একবার ভাবুন তো! ওয়ার্নারের প্রাপ্তি অবশ্য উইকেটেই সীমাবদ্ধ নয়। অধিনায়ক হিসেবেও ওয়ার্ন ছিলেন সময়ের সেরাদের একজন। যদিও জাতীয় দলে নেতৃত্ব পাননি কখনো, তবে তার ক্রিকেট মস্তিষ্ক যে সবার থেকে বেশি সচ্ছ্ব ছিল; তা অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। যার বড় উদাহরণ ২০০৮ আইপিএল। সবচেয়ে কম বাজেটের দল নিয়ে রাজস্থানকে শিরোপা জেতান তিনি। তাছাড়া, ৯৩-র গ্যাটিং বল, ‘০৫ এর স্ট্রাউস বল, তার আগে চন্দরপলকে করা বিস্ময় বল তার কীর্তিরই বিস্ময়কর নিদর্শন। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়াকে ‘৯৯ এর বিশ্বকাপ জিতিয়েও আলোড়ন ফেলে দেন ওয়ার্ন। জেতেন সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তাছাড়া এক অ্যাশেজ সিরিজে ৪০ উইকেট নিয়ে বসে যান চির অমরত্বের রথে।
লেগ স্পিন বৈচিত্রে যেমন ভরপুর ছিলেন ওয়ার্ন। বৈচিত্রে ভরপুর ছিল তার জীবনও। ক্রিকেটের বাইরে ভিন্ন এক মানুষ ছিলেন তিনি। বিতর্ক কখনো তার পেছন ছাড়েনি। সহ অধিনায়ক থাকা অবস্থায় এক নার্সকে অশ্লীল ম্যাসেজ পাঠিয়ে শোরগোল ফেলে দেন ক্রিকেট পাড়ায়। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ড্রাগস নেয়া, অবাধ যৌনাচারসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে সময়ে সময়ে। তবে বড় অভিযোগ ছিল ক্রিকেটের তথ্য পাচার সম্পর্কিত। ক্রিকেট জুয়ায় জড়িয়ে যাবার কারণে শাস্তির মুখেও পড়তে হয় তাকে। তাছাড়া অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর সাথে তিক্ত সম্পর্কের কথাও প্রকাশ পেয়েছিল এক সময়ে। এমনকি একটি ব্রিটিশ প্রতিবেদনেদাবি করা হয় যে- ওয়ার্নের সাথে নাকি হাজার মহিলার সম্পর্ক ছিল! আছে আরো অসংখ্য বিতর্ক। তবে বিতর্কিত জীবন যাপন করা ওয়ার্ন সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়ে যান নিজের মৃত্যুদিনে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে বান্ধবীদের সাথে থাইল্যান্ডে ঘুরতে যান ওয়ার্ন। সেখানে ৪ মার্চ বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু কোনো খোঁজ মিলছিল না।
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ওয়ার্নের রুমের দরজায় বন্ধুরা নক করেন। সাড়া না মিললে ভাঙা হয় সেটি, রুমে ওয়ার্নের খোঁজ মিললেও তিনি মাটিতে পড়ে ছিলেন অচেতন অবস্থায়। যেখান থেকে আর কখনো চোখ মেলেননি ওয়ার্ন। তবে তার মৃত্যু ঘিরে নানান ধোঁয়াশা রয়েছে। বলা যায় সারাজীবন রহস্য হয়ে থাকা ওয়ার্ন মৃত্যুতেও রেখে গেলেন রহস্য। আজ তার মৃত্যুর দুই বছর হলেও এখনো যা থেকে বের হতে পারেনি সমর্থকরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com