সমাজের প্রতিটি মানুষ একে অপরের সাথে কোনো না কোনো উপায়ে আত্মীয়তার সুতোয় আবদ্ধ। সেই বাঁধন অটুট রাখার তাগিদে বিভিন্ন সময় একে অপরের বাসায় বেড়াতে যায়। মেহমানদারি আল্লাহ তায়ালার পছন্দনীয় একটি আমল এবং নবীদের সুন্নত। পবিত্র কুরআনে হজরত ইবরাহিম আ:-এর মেহমানদারির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনার কাছে কি ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে? যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হলো এবং সালাম বলল। তিনিও বললেন, ‘সালাম’। (এরা তো) অপরিচিত লোক। অতঃপর তিনি দ্রুত আপন পরিবারের কাছে গেলেন এবং নিয়ে এলেন একটি মোটাতাজা (ভাজা) বাছুর। আর তা তাদের সামনে রেখে বললেন, আপনারা খাচ্ছেন না কেন?’ (সূরা জারিয়াত : ২৪-২৭)
কারো বাসায় মেহমান এলে মেজবানের উচিত তার সাধ্যমতো আদর-যতœ করা। ভালোভাবে সমাদর করা। এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (রিয়াদুস সালেহিন-৭১১)। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের বাসায় বেড়াতে গিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে যায়। ফিরে আসতে চান না। এমনটি অনুচিত। মেহমানদারি সর্বোচ্চ তিন দিন। এর বেশি হলে সেটি সাদাকা। এতে মেজবান বিপাকে পড়েন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে মেহমানের যথাযথ সমাদর করতে পারেন না। ফলে মেজবান গুনাহগার হন। বিশেষ করে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে সীমাহীন র্ঊর্ধ্বগতি এমন সময় কারো বাসায় মেহমান হওয়ার আগে সেটি মাথায় রাখতে হবে। হজরত আবু শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবনে আমর খুজায়ি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের পারিতোষিকসহ তার সম্মান করে।’ লোকেরা বলল, তার পারিতোষিক কী, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, ‘এক দিন ও এক রাত উত্তমভাবে পানাহারের ব্যবস্থা করা। আর সাধারণত মেহমানের খাতির তিন দিন পর্যন্ত। (অতঃপর স্বেচ্ছায় তার চলে যাওয়া উচিত)। তিন দিনের অতিরিক্ত হবে মেজবানের জন্য সাদাকাহস্বরূপ। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের কাছে এতটা থাকা বৈধ নয়, যাতে সে তাকে গুনাহগার করে ফেলে।’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! তাকে কিভাবে গুনাহগার করে ফেলে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘এ ওর কাছে থেকে যায়, অথচ ওর এমন কিছু থাকে না, যা দ্বারা সে মেহমানের খাতির করতে পারে।’ (রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস-৭১২) লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া আরাবিয়া মাখজানুল উলুম, ময়মনসিংহ সদর