সীমান্তবর্তী নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় পাহাড়ি গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমেও পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এবারের তীব্র দাবদাহে সেই সংকট যেনো আরও বেড়েছে। পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরেই এখন বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। পাহাড়ি ঝরনা বা ছড়ার ময়লাযুক্ত পানি ও পুকুরের ঘোলা পানিই এখন একমাত্র ভরসা। দুর্গাপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গাপুর সদর ও কুল্লাগড়া ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি অঞ্চল। সেখানকার ১০ থেকে ১২টি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস। তাদের কষ্টের অপর নাম পানি। পাহাড়ি ঝরনা, ছড়া ও পুকুরের দূষিত পানি দিয়ে করতে হচ্ছে রান্নাবান্না, গোসলসহ সব ধরনের কাজ। খেতেও হচ্ছে ওই পানি ফলে দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত রোগ। বর্তমানে ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের কষ্ট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এনিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর ইউনিয়নের গোপালপুর, ভবানীপুর, ফান্দা, বারমারী, ভরতপুর, গাজিকোনা গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় শুকনো মৌসুমেও দেখাদেয় পানির সমস্যা। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সাধারণ নলকূপ দিয়ে পানি আসে না। এজন্য তাদের বাধ্য হয়েই পুকুর বা পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করতে হয়। আর এতে পেটের অসুখ, চর্ম রোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। ওই গ্রামগুলোতে দিন আনে দিন খায় এমন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো কিংবা গভীর কূয়া তৈরি করা সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল বসালেও বেশিরভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি। চাকের রিং বসিয়ে অ-গভীর কুয়া তৈরি করে খাবার পানি সংগ্রহ করলেও শুকনো মৌসুমে সেখানে পানি থাকে না। কোনোটাতে পানি থাকলেও তা খাওয়ার অনুপযোগী। একটু ভালো পানি পান করার আশা করলেও দূরদূরান্ত থেকে কাঁধে করে বয়ে এনে পান করতে হয়। দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের আদিবাসী নারী বুবু মারাক জানান, তাঁর বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ঝড়না বা ছড়ায় যে পানি আছে ওইডাই খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। গ্রামের সবারই একই অবস্থা। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসা রেগুলার মানকিন বলেন, আমাদের সু-পেয় পানির খুবই অভাব। পাহাড়ি ছড়ায় গর্ত করে সে জায়গা থেকেই পানি সংগ্রহ করি আমরা। কিন্তু এই পানি বিশুদ্ধ না হওয়ার নানা রকমের রোগের দেখা দেয় সবসময়ই। আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। দুর্গাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তবর্তী আদিবাসী গ্রামগুলোতে গভীর টিউবওয়েল বসাতে হলে পাথর সরিয়ে প্রায় চার থেকে পাঁচশ ফুট নিচ পর্যন্ত যেতে হয়। তার জন্য খরচ অনেক ব্যয়বহুল, যা সেখানকার মানুষের পক্ষে জোগানো কষ্টসাধ্য। তবে বিকল্প হিসেবে গভীর রিং টিউবওয়েল বসানো যায় তাহলে পাহাড়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সু-পেয় পানির সমস্যা কিছুটা দূর হবে। এ ব্যাপারে দুর্গাপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের জন্য গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। ওই এলাকায় পানি সংকট নিরসনে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এই পানির সংকট দূর করতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাচ্ছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করবো। এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম. রকিবুল হাসান বলেন, পানির সংকটের করতে ও ওই গ্রামগুলোতে সু-পেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে। আশা করছি বিষয়টি নিরসন হবে।