সারাদেশের ন্যায় শিল্পাঞ্চল নরসিংদীর মাধবদীতে গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দেশে চতুর্থবারের মতো হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবওহাওয়া অধিদপ্তর। এমন তাপপ্রবাহে শরীরে পানির চাহিদা পূরণে অনেকে ডাব এবং তরমুজ কিনতে চাইছেন মাধবদীর স্থানীয় জনগন। তবে ক্রেতাদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে ডাব ও তরমুজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মাধবদীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে এখানকার তরমুজের দোকানে ক্রেতা বাড়লেও ডাবের ক্রেতা কমেছে। শুক্রবার শিল্পাঞ্চল মাধবদী বাজার ও আশপাশের এলাকার ভ্রাম্যমাণ দোকানে সরেজমিনে দেখা যায়, আগে যেসব ডাব ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হতো সেসব ডাব ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে তরমুজের দাম বেড়ে আকারভেদে ছোট থেকে মাধ্যম সাইজের প্রতিটি তরমুজ ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন, তীব্র তাপদাহে পানি জাতীয় ফলগুলোর চাহিদা বাড়ায় সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় গ্রাম থেকে ডাব আসছে না, এ কারণে দাম কিছুটা বেশি। এছাড়া তরমুজের মৌসুম শেষের দিকে। জমিতে এখন আর বেশি ফল নেই, যার ফলে বাজারে সরবরাহ কম। এ কারণে তরমুজের দাম বেড়েছে। মাধবদী বাজারের বেশ ক’জন ব্যবসায়ী বলেন, গরমের মধ্যে পানি জাতীয় ফল মানুষ বেশি খায়। এখন বাজারে পানি জাতীয় ফল তরমুজ ও ডাব। তাই তরমুজের চাহিদা বেশি, দামও বেশি। তবে গত কয়েকদিনে ডাবের ক্রেতা কমেছে। মাধবদীর বিরামপুরে ভ্রাম্যমাণ ডাব বিক্রেতা সাইফুল বলেন, পাইকারি থেকেই প্রতিটি ছোট ডাব ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। সারাদিনে ৩০-৩৫টা ডাব বিক্রি হয়। ১০০ টাকার কম বিক্রি করলে লাভ বলতে কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, রোজায় প্রতিদিন যে সংখ্যক ডাব বিক্রি হতো এখন তাও হচ্ছে না। তাপপ্রবাহে মানুষ কষ্ট ভোগ করছে, তবুও ডাবের পানি খাচ্ছে না। এই গরমে ডাব না খেলে কখন খাবে? এমন প্রশ্ন ডাব বিক্রেতার পরে তিনিই বলেন, হয়ত বেশি দামের কারণে কম বিক্রি হচ্ছে। শফিকুল নামের এক ক্রেতা বলেন, প্রচ- গরমে ডাবের পানি কিছুটা স্বস্তি দেয়। কিন্তু ছোট ডাবের দামও ১০০ টাকা। একটা ডাবে দুই গ্লাস পানিও হবে না, তাও একশ টাকা। বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, বড় ডাব ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডাব এখন বিলাসী পণ্যে রূপ নিয়েছে। ডাব এখন বড় লোকের হাতে শোভা পায়। ডাব মূলত আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য না। আনোয়ার হোসেন নামে এক তরমুজ বিক্রেতা বলেন, আমরা খুচরা বিক্রেতা। গোড়া থেকে দাম বাড়লে আমরা বাড়াই। কমলে আমরাও কমে বিক্রি করি। এখন আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, রোজার মধ্যে ১০০ পিচ তরমুজ কিনতে পারতাম ১৮-১৯ হাজার টাকায়। আর এখন সেটা কিনতে লাগে ২৫-২৬ হাজার টাকা। কারণ বাজারে এখন তরমুজ নাই। এখন তরমুজ ভালো এবং মিষ্টি বেশি। তিন কেজি ওজনের প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। আর ৪-৫ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। বাজারে এখন ২০০ টাকার নিচে কোনো তরমুজ নেই। ২৮০ টাকা দিয়ে মাধবদী বাজার থেকে মাঝারি সাইজের একটি তরমুজ কিনছিলেন জাকির। তিনি বলেন, গরমের কারণে ছেলে-মেয়েরা তরমুজ খেতে পছন্দ করে। কিন্তু বাজারে তরমুজের দাম বাড়ছে। ঈদের পর তরমুজ কিনেছি পিস হিসেবে। এখন কেজি হিসেবে দাম চাচ্ছে তরমুজ ব্যবসায়ীরা।