রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

নেত্রকোনায় বোরো ফসলের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে হাঁসি

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

নেত্রকোনায় চলতি বোরো মওসুমে ফসল বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে এখন হাঁসির ঝিলিক। প্রকৃতি পরিবেশ অনুকূল থাকায় জেলার হাওরাঞ্চলে চলছে এখন ধান কাটার মহোৎসব। চারদিকে মনকাড়া ধানের মৌ মৌ গন্ধ। ঘরে বসে নেই গৃহবাধূ কিষাণীরাও, তারা মাঠে মাঠে ধান উড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উঠতি বয়সের ডানপিটে শিশুরাও সেখানে মনের আনন্দে দূরান্ত পনায় মেতে উঠেছে। কুড়ানি কিশোরীরা ধানের ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ ধান কুড়ানির কাজে এখান থেকে সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছে। আর সুযোগ সন্ধানী ফঁড়িয়ারা ধান মাড়ানোর বিভিন্ন খলায় ধান ক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাওরাঞ্চলে এখন এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিরাজ করছে।নেত্রকোনা জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মুওসুমে ১ লক্ষ্য ৮৫ হাজার ৩২০ একর জমিতে বোরো ফসল আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ লাখ ৩৭ হাজার ২২৩ টন ধান। নেত্রকোনা ধান উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে গন্য। জেলার ১০ উপজেলার ছয়টিতে হাওর রয়েছে। আর সেখানে জমির পরিমান ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। এক সময় শ্রমিক সঙ্কটের কারনে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়তেন কৃষকগন। কিন্তু এখন কৃষকদের সহায়তায় ভর্তুকি মূল্যে হওরাঞ্চলে ৫৬০টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। সরকারি কম্বাইন হারভেষ্টার দিয়ে ১ একর জমির ধান কাটাতে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলে জানানো হয়। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও সেখানে তিন শতাধিক হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটানো হচ্ছে। পাশাপাশি আবার অনেকে অধিক মূল্যে দূর-দূরান্তের শ্রমিক দিয়েও ধান কাটাচ্ছেন। উজান থেকে নেমে আসা এক মূহুর্তের পাহাড়ি ঢলে রাতারাতি ফসল তলিয়ে কৃষকদের স্বপ্ন সাধ বিলীন হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তাই আকাশে মেঘ দেখলেই কৃষকদের মনে ফসল হারানোর আতঙ্ক শুরু হয়। প্রবল বর্ষণ ও অকাল বন্যায় গত মওসুমেও হাওরাঞ্চলের কৃষকরা অর্ধেক ফসলও গোলায় তুলতে পারেননি। প্রায়ই আগাম বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে কৃষকগন ব্যাপক ক্ষয়, ক্ষতির সম্মূখীন হয়ে থাকেন। এবার প্রকৃতি সুপ্রসন্ন হওয়ায় মনের আনন্দে ফসল কাটছেন। কিন্তু অজানা শঙ্কা তাদের পিছু তারা করায় আনন্দের মাঝেও দুঃচিন্তায় থাকেন সারাক্ষন ফসল না উঠা পর্যন্ত। কৃষিবিদগন জেলায় এবার ৮ লাখ ২ হাজার ৬শ’ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৭শ’ ১১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। যা দেশের অর্থনীতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও ধারনা করা হচ্ছে।বরাবরের মত এবারও ফঁড়িয়াগন ধান মাড়ানোর সাথে সাথে বিভিন্ন খলা থেকে স্বল্প মূল্যে ধান ক্রয় করছেন। এখন মোটা জাতের ধান ৮শ’ থেকে ৮৫০ টাকা থেকে এবং চিকন জাতের ধান ৯শ’ থেকে ৯.৪০ টাকা মন দরে বিক্রি করছেন। হাতের কাছে ক্রেতা পাওয়ায় কম দামেই ধান বিক্রি করে থাকেন কৃষকগন। যে কারনে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত মূল্য পান না। আগামী ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহের অভিযান শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আপাতত ভারী বৃষ্টিপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোন সম্ভাবনা না থাকায় কৃষকগন নির্বিগ্নে ফসল কাটতে পারছেন। হাওরাঞ্চলের কৃষক ইয়াদ আলী বলেন, ‘শরীরের ঘাম ঝড়ানো ফসল পেটে না দিয়া খলায় কমদামে বিক্রি করতে হইতাছে বাধ্য হইয়াই। আগে মহাজনের ঋণের টাকা পরিশোধ কইরা পরে নিজের প্রযোজনের কথা ভাবা যাইবো। তবে এবার ফসল ভালা হওয়াই আমরা অনেক খুসী।’ ইসলামপুর গ্রামের চান মিয়া বলেন, এই বার ধানের ফলন ভালই হইছে, তবে প্রচন্ড তাপে কিছু কিছু জমির ধান চিটা হইয়া গেছে। নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিজালক মো: নুরুজ্জামান বলেন, চলতি মওসুমে পর্যাপ্ত সার মজুদ থাকায় ও ব্রি আর ২৮, ২৯ জাতের ধান কমিয়ে কৃষকদের ব্রি-আর ৮৮. ৮৯ ও ৯২ উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান রোপনে পরামর্শ ও সহায়তার কারনে রোগ বালাই কম হওয়ায় উৎপাদন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। হাওরাঞ্চলসহ জেলায় এখন পর্যন্ত ৩০ ভাগ ফসল কাটা হয়েছে। আশা করছি মে মাসের মধ্যে হাওরসহ সমস্ত ফসল কাটা হয়ে যাবে। ভর্তুকি মূল্যে হারভেষ্ট মেমিন দিয়ে ফসল কাটায় প্রতি এক একরে অন্তত ১০ হাজার টাকা সেভ হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com