বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নাকী তার বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না। আমি বলি, আপনি অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতা ছেড়ে দেন। দেশের জনগণ নির্ধারণ করবে দেশ কে চালাবে। এই চক্র ব্যাংক ধ্বংস করেছে, বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, জ্বালানি খাতে বকেয়া ৪৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। সরকার শুধুমাত্র ঋণের সুদ পরিশোধ করছে। সেই সুদ দিতেই এখন সরকার নতুন করে ঋণ করছে। সুদ পরিশোধ করতেই জনগণের ঘাড়ে ঋণের নতুন বোঝা চাপাচ্ছে। ঋণের মূল টাকা তো থেকেই যাচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নাই।
ডলারের দাম বেড়ে ১১৭ টাকা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি সরকারি হিসেবেই প্রায় ১০ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্য নি¤œবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। নি¤œ আয়ের মানুষ তিন বেলা খাবার জোটাতে পারছে না। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম । সরকার এখনো লুটপাট জারি রেখেছে। এই সরকারকে অপসারণ করতে না পারলে দেশটাকে বাঁচানো যাবে না, দেশের জনগণকে বাঁচানো যাবে না।
বিদ্যুৎ খাতে কোন ইনডেমনিটি দেয়া হয়নি- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য উল্লেখ করে মান্না বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন ২০১০- এ বিদ্যুৎ খাতে নেয়া যেকোনো পদক্ষেপ এবং খাত সংশ্লিষ্টদের স্পষ্ট দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এই আইনের ৯ ধারায় আদালত, ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে ‘এই আইনের অধীন কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না’। ১০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি, সাধারণ বা বিশেষ আদেশের অধীন দায়িত্ব পালনকালে সরল বিশ্বাসে কৃত, বা কৃত বলিয়া বিবেচিত কোন কার্যের জন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোন প্রকার আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে না’। এটাকে দায়মুক্তি বলবেন না তো কী বলবেন? অথচ এরপরেও প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে কোন ইনডেমনিটি দেয়া হয়নি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, রিজার্ভ এখন ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। ৪ বিলিয়ন ডলার দিতে হবে জ্বালানি খাতে, আগামী ৬ মাসে বিদেশি ঋণের সুদের কিস্তি দিতে হবে ২০০ কোটি ডলার। ৬ মাস পর এই দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার।