শেষ ওভারে বাংলাদেশকে হারাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ৯ রান! সাকিব আল হাসান হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন, হার সন্নিকটে। মাথা নিচু করে এগোচ্ছিলেন বাউন্ডারি লাইনের দিকে। বোলিংয়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম বলেই ছয় হাঁকালেন কোরি অ্যান্ডারসন। ম্যাচ একদম নাগালে। স্ট্রাইক বদল হলে অপর ব্যাটার হারমিত সিং এক্সট্রা কাভারে চার মেরে প্রথম দেখায় বাংলাদেশকে লজ্জা দিয়ে এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়। গত মঙ্গলবার (২১ মে) হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে মাত্র ১৫৩ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। তাড়া করতে নেমে ৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে যয় নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলে! এক যুগেরও বেশি সময় পর খেলা শুরু করা দেশটির বিপক্ষে হার নিশ্চিত ভাবে নাজমুল হোসেন শান্তদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য। প্রাণহীন ব্যাটিংয়ের পর নির্বিষ বোলিংয়ে হারতে হয়েছে বড় ব্যবধানে।
কোরি অ্যান্ডারসন-হারমিত সিংয়ের ২৮ বলে ৬২ রানের জুটি ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়। হারমিত মাত্র ১৩ বলে ৩৩ ও অ্যান্ডারসন ২৫ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। ষষ্ঠ উইকেটে যুক্তরাষ্ট্রের এটি রেকর্ড জুটি। ২৭ রানে প্রথম উইকেট হারালেও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে পালটা আক্রমণ করে। আন্দ্রেইস গাউসকে ফিরিয়ে রিশাদ হোসেন জুটি ভাঙলে বাংলাদেশ শিবিরে ফেরে স্বস্তি। গাউস ২৩ রান করেন। একশর আগে আরও তিন উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানরা চাপে ফেলে স্বাগতিকদের। তবে অ্যান্ডারসন-হারমিত ম্যাচটি নিজেদের করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। রান দেন ৪১! এর আগে টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পর তাওহীদ হৃদয়ের ফিফটিতে কোনোমতে দেড়শ পার করে বাংলাদেশ। ৪৭ বলে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন তাওহীদ হৃদয়। ফিফটি করেন ৪০ বলে। তার ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মার ছিল। তাওহীদের সঙ্গে ৫ বলে ৯ রানে অপরাজিত ছিলে জাকের আলী। অনভিজ্ঞ বোলিং লাইন-আপের সামনে বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাশ-সৌম্য সরকার ছিলেন নড়বড়ে। শুরুতে দুই জীবন পান লিটন। তবু রাঙাতে পারলেন না। ১৫ বলে ১৪ রানে তার আউটে ভাঙে ২৭ বলে ৩৪ রানের জুটি।
লিটনের ফেরার পর মাত্র ১ বল খেলতে পেরেছেন সৌম্য। সেই বলে আউট হন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ২০ রান। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে মাত্র ৩৭ রান! দুই ওপেনারের বিদায়ের পর তাওহীদের সঙ্গী হন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের নামের পাশে সুবিচার করতে পারেননি এই ব্যাটার। বিদায় নেন ১১ বল খেলে, মাত্র ৩ রানে। শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে এসে সাকিব আল হাসানও টিকতে পারেননি। তাওহীদের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে মাত্র ৬ রানে ফেরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
শান্ত-সাকিব বিদায় নিলে বাংলাদেশের রানের চাকা যেন সচল হয়। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন তাওহীদ। দুজনে প ম উইকেট জুটিতে ৪৭ বলে ৬৭ রান যোগ করেন। ২২ বলে ৩১ রানে মাহমুদউল্লাহ ফিরলে ভাঙে জুটি। এরপর ইনিংস শেষ করে আসেন তাওহীদ ও জাকের। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন স্টিভেন টেইলর। ১টি করে উইকেট নেন সৌরভ-জেসি সিং। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের দশ ধাপ নিচে আছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ তাদের কাছেই বিশ্বকাপের ঠিক আগে ম্যাচ হেরে বড় ধাক্কা হজম করলো বাংলাদেশ।