শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

হজ ও কোরবানির জিলহজ মাসের আমল

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪

আগামী ১৭ জুন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪৫ হিজরি সনের পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। ফলে গত ৮ জুন শনিবার থেকে পবিত্র জিলহজ মাস গণনা শুরু হয়েছে।
শুরু হয়েছে হিজরি বছরের শেষ মাস জিলহজ, যা হজ ও কোরবানির জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। এ মাসের ৯ তারিখ সারাবিশ্ব থেকে আগত মুসলিম উম্মাহ আরাফায় একত্রিত হন হজের নিয়তে। পরদিন বিশ্বব্যাপী সবাই কোরবানি করেন। এবছর ১৭ জুন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের নামাজের পর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করবে মুসলিম উম্মাহ। এ মাসের প্রথম দশকের রয়েছে বিশেষ আমল, যার অন্যতম হলো কোরবানি। কারণ, এ জিলহজ মাসেই হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানির মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তাঁর এ ধারা মুসলিম উম্মাহ কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। রাখবেন।
তদুপরি, আমল ও ফজিলতে মর্যাদাসম্পন্ন জিলহজের প্রথম দিনগুলো খুবই মর্যাদাপূর্ণ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এ দিনগুলোর আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল বেশি প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? উত্তরে নবিজী বললেন, ‘না’, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হন এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসেন। (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা সুরা ফজরের শুরুতেই জিলহজের প্রথম দশ রাতের কসম খেয়েছেনে। তিনি বলেন, ‘কসম ফজরের এবং দশ রাতের।’ এ দশ রাত দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম দশকই প্রমাণিত। জিলহজ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোর মর্যাদা এত বেশি যে, ৯ জিলহজকে হজে অংশগ্রহণকারী সব মানুষকে নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করে নেওয়ার দিন। আবার ৯ জিলহজ দিবাগত রাতকে (মুজদালিফার রাত) শবে কদরের চেয়েও মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে মনে করা হয়। এ রাতের ইবাদত বন্দেগিতে আল্লাহ তাআলা জুলুমকারীকেও ক্ষমা করে দেন।
মুসনাদে আহমদে এসেছে, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশকের শেষ দুদিন অর্থাৎ ‘ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর (কোরবানির দিন) হওয়ায় তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ জিলহজ মাসের মর্যাদা বেশি হওয়ার আরো দুটি কারণ হলো- এ মাসেই হজ ও কোরবানি আদায় করতে হয়। যা মর্যাদাপূর্ণ মাস রমজানেও আদায় করা সম্ভব নয়।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিলহজ মাসের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এরমধ্যে হলো:
১. কোনো ওজর আপত্তি না দেখিয়ে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিদের হজ আদায় করা।
২. যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের কোরবানি আদায় করা।
৩. জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি সম্পাদনের আগে পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা।
৪. জিলহজ মাসের পাঁচ দিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করা। তাকবিরে তাশরিক হলো- উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’
অর্থ : ’আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; সব প্রশংসা মহান আল্লাহ জন্য।’ আর তা শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে। আর শেষ হবে ১৩ জিলহজ আসার নামাজে। যা এ পাঁচ দিন ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফিরানোর পর পড়া ওয়াজিব। চাই নামাজ একাকী আদায় করা হোক বা জামাতে। তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর নারীরা নিরবে পড়বে। অর্থাৎ নারীদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে।
৫. শুধু ঈদের দিন (১০ জিলহজ) ছাড়া জিলহজের প্রথম দশকে (৯দিন) রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ঈদের দিন ছাড়া) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করতেন।
৬. এ মাসের নবম দিন ও রাত আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি হলো আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। আর রাতটি হলো মুজদালিফায় (শবে কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ) অবস্থানের রাত। বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে নবিজী সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এ দিনের রোজা পালনকারীর বিগত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।
এ ছাড়াও জিলহজ মাসের প্রথম দশকে বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করা, আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা, যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং বেশি বেশি সাদকাহ করা অনেক সাওয়াবের আমল রূপে স্বীকৃত।
জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল আল্লাহর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল যে, মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককেই বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত। আল্লাহর দেওয়া বিধানগুলো যথাযথ আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নাত, নফল, মোস্তাহাব ও নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দান-অনুদান, সাহায্য-সহায়তা বেশি বেশি করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসব্যাপী নামাজ, রোজা (ঈদের দিন ছাড়া), দান-অনুদান, হজ, কোরবানি, জিকির আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কল্যাণকর কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com