আগামী ১৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদে কোরবানির পশুকে ঘিরে এরই মধ্যে জমতে শুরু করেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী। গতকাল সোমবার (১০ জুন) সকালে গাবতলী গিয়ে দেখা যায়, হাটের স্থায়ী ও অস্থায়ী দুই অংশই কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। গাবতলী পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় গবাদি পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। প্রতি ঘণ্টায় ট্রাকে ট্রাকে ঢুকছে গরু-ছাগল। হাটে আসা ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। পশু বিক্রিও হচ্ছে টুকটাক। তবে এখনো ক্রেতারা বাজার যাচাই করতে আসছেন বলে জানান হাটের বিক্রেতারা। ঈদের আগের দুই-তিন দিন অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৬ জুন হাট পুরোপুরি জমে উঠবে বলে আশা করছেন পশু বিক্রেতা ও হাট কর্তৃপক্ষ। গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাটের ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম বলেন, আশা করছি আগামী শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে হাট জমে উঠতে শুরু করবে। বর্তমানে টুকটাক যে বেচাকেনা হচ্ছে, ধীরে ধীরে সেটাও বাড়বে। ঈদ যত এগিয়ে আসবে, বেচাকানাও তত বাড়বে। ঈদের আগের দুই-তিন দিন হাট পুরো জমে উঠবে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত হাটে ৮-১০ হাজার পশু এসেছে। নিয়মিত আরও পশু আসছে। আশা করছি এবার গাবতলীর হাটে ২০-২৫ হাজার পশু বিক্রি হবে।
হাটের সার্বিক প্রস্তুতি পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আবুল হাসেম বলেন, ১২টি হাসিল ঘর, র্যাব, পুলিশ ও সিটি এসবির জন্য বুথ, ব্যাংকের জন্য বুথ এবং তিনটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। হাটে চারটি চেকপোস্ট রয়েছে। পাশাপাশি দুই শিফটে প্রায় দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক হাটের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিবারের মতো এবারও জাল টাকা শনাক্তের জন্য পর্যাপ্ত মেশিন থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসিল ঘর ছাড়াও ১০-১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ থাকবে। টাকা জাল কি না- সে বিষয়ে কারো সন্দেহ হলে সেসব বুথ বা হাসিল ঘরে গিয়ে তারা টাকা পরীক্ষা করতে পারবেন। এছাড়া পশুদের চিকিৎসায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও চিড়িয়াখানার চিকিৎসকসহ আলাদা তিনটি টিম হাটে সার্বক্ষণিকভাবে ঈদ পর্যন্ত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, হাটে অল্প হারে বেচাকেনা শুরু হলেও পুরোপুরি জমতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। এবার হাটে বড় এবং মাঝারি গরু বেশি এসেছে। সেগুলোই এখন বিক্রি হচ্ছে। ছোট গরু এখনো তেমন আসেনি। শেষের দিকে ছোট গরু এলে সেগুলোই বেশি বিক্রি হবে বলেও জানান হাটের বিক্রেতারা।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ২৫টি গরু নিয়ে আসা বেপারী তুষার মিয়া বলেন, আমার আনা গরুর মধ্যে ১০টি গরু এর মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সেগুলো ছিল বড় সাইজের। প্রতিদিন হাটে মানুষ অনেকে এলেও বেশিরভাগ দেখতে আসেছে। গরুর দাম শুনছে কিন্তু নিজেরা দাম বলছে না। যাদের রাখার জায়গা আছে তারাই এখন গরু কিনছে। যাদের জায়গা নেই তারা ঈদের এক-দুই দিন আগে কিনবে। আমিনুল নামের আরেক বিক্রেতা এসেছেন বগুড়া থেকে। তিনি বলেন, ১৫টি গরু নিয়ে হাটে আসছি গতকাল। কাল এবং আজ মিলিয়ে ৬টি বিক্রি হয়েছে। এবার গরুর দাম বেশি, তাই বেচাকেনা এখনো পুরোপুরি জমেনি। মানুষ ভাবছে শেষেরদিকে দাম কমবে। কিন্তু এবার শেষের দিকে গরুর দাম কমবে বলে মনে হয় না। ঈদের দু-এক দিন আগে বরং গরুর সংকট দেখা দিতে পারে। তখন দাম আরও বাড়বে।
মোহাম্মদপুর থেকে কোরবানির পশু দেখতে গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী রাসেল মৃধা। তিনি বলেন, হাট মোটামুটি জমে উঠেছে। আজকে চলে এলাম গরু কিনতে। পছন্দ হলে আজকেই কিনে নিয়ে যাবো। তবে এবার গরুর দাম অনেক বেশি বলে মনে হচ্ছে। ধানমন্ডি থেকে শোয়েব ও অরেল নামের দুই বন্ধু হাটে এসেছেন। তারা বলেন, বাজার পরিস্থিত দেখতে এসেছি। কিনবো ঈদের একদিন আগে। বাসায় রাখার সমস্যা তাই আজকে কিনবো না। ঈদের আগে কিনবো৷ এখন শুধু দেখে যাচ্ছি৷এবার গরুর দাম বেশি। আশা করছি, শেষের দিকে দাম কমতে পারে।