দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ দলের অন্যতম চালিকাশক্তি সাকিব আল হাসান। ব্যাট-বলে দলের এক নম্বর পারফর্মার। দলের সাফল্যের অন্যতম রূপকার ও স্থপতি। সব ফরম্যাটে দেশের হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ সেরার পুরস্কারটিও সাকিবের হাতেই শোভা পাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিব রীতিমত গেম চেঞ্জার ও ম্যাচ ডিসাইডার। কিন্তু এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই চেনা সাকিবকে সেভাবে পায়নি দল। সাকিব নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি একদম।
সাকিব কেন পারেননি এবার? সাকিবের বয়স (৩৭ বছর ৯৩ দিন) হয়েছে। ফর্মটাও কমেছে। ক্যারিয়ারের লাল সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। পাশাপাশি ক্রিকেটের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কমেছে। নানা বাণিজ্যিক ও সামাজিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন সময় তাকে নানা সামাজিক ও বাণিজ্যিক কর্মকা-ে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা গেছে। অনেকের মতে, আগের মতো আর শতভাগ ক্রিকেটে মনোযোগী নন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সব মিলেই কি তার খারাপ খেলা?
আর সে কারণেই কি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৬৪ রান করা ছাড়া পুরো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিবের রান মোটে (৮, ৩, ৬৪, ১৭, ৮, ১১, ০) ১১১। আর উইকেট মাত্র ৩টি।
সমস্যটা কোথায় ? সাকিবকে সেই কিশোর বয়স থেকে চেনেন এবং জানেন, তিনি হলেন কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম। তার হাতেই সাকিবের বেড়ে ওঠা এবং তিনিই সাকিবের গুরু ও মেন্টর। এখনো স্কিল আর কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হলে সাকিব সবার আগে ছুটে যান ফাহিমের কাছেই।
ফাহিম মনে করেন, উপরোক্ত সবগুলোর মিশ্রণেই সাকিবের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে দেশবরেণ্য কোচ ও বিশ্লেষক ফাহিম বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস এরিনাটা অনেক বড়। এখানে আপনি যদি পুরো সময় না দেন এবং শতভাগ মনোযোগী না হন; এটা ওটা করবো ভাবেন তাহলে কিছুই হবে না। অন্যদিকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি মনোনিবেশ করবো আবার ক্রিকেটও খেলবো, তাহলে মাশুল গুনতে হবে চড়া। আমার মনে হয়, ক্রিকেটের সঙ্গে যে সম্পৃক্ততা কমেছে, সাকিব নিজেও এটা বুঝেছে। সে তো প্রায় এক বছর ক্রিকেটই খেলেনি। এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও খেলেনি। ক্রিকেটের কার্যক্রমের সঙ্গেই সম্পৃক্ততা ছিল কম। যুক্ত ছিল না।’
সাকিবের সেই বিকেএসপির ফাহিম স্যার মনে করেন, একটা লম্বা সময় ছিল যখন কিছু দিন ক্রিকেটে গ্যাপ দিয়ে হলেও সাকিব সেটা পূরণ করতে পেরেছেন। কিন্তু এখন তার বয়স হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো আসরে ভালো খেলার জন্য যেমন সময় নিয়ে ও ভালো প্রস্তুতি নেওয়া দরকার ছিল, সাকিব তা নেননি।
ফাহিমের ব্যাখ্যা, ‘মাঝেও কিছু দিন বিরতি দিয়ে সাকিব খেলতে নেমেছে। মাঠে নেমে সে ভালো পারফর্ম করায় কেউ হয়তো টেরই পায়নি কিছুদিন ক্রিকেটের বাইরে থাকার বিষয়টি। ক্রিকেটীয় কর্মকা- থেকে দূরেও ছিল। কিন্তু এখন বিশেষ করে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর সেভাবে আর হয় না। বয়স ও অন্য সব মিলিয়ে কাজটা আর আগের মতো হয়নি।’ কোচ ফাহিমের পরামর্শ হলো, এরকম ক্ষেত্রে সাকিব একা নয়, যদি কেউ অন্য কিছুর সঙ্গে জড়িত থেকেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চায়, তখন তাকে আরও অনেক বেশি ক্রিকেটে সময় দিতে হবে। প্র্যাকটিস করতে হবে আরও বেশি করে। আমার মনে হয় না, যথেষ্ট সময় সাকিব দিতে পেরেছে। আদর্শ প্রস্তুতি বলতে যা বোঝায়, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তা ছিল না সাকিবের। সে কারণে মোটেই ভালো করতে পারেনি। তার স্ট্যান্ডার্ড যদি ধরি, তাহলে সাকিব মোটেই ভালো খেলেনি। সাকিবের মান হিসেবে যা মোটেই সন্তোষজনক না।’