রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

মহররম মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

মো: সাইফুল মিয়া
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪

মহররম মাস হিজরি বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস। মহররম একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ অলঙ্ঘনীয়, পবিত্র, সম্মানিত ইত্যাদি। পবিত্র আল কুরআনে এ মাসকে শাহারুল হারাম বা সম্মানিত মাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: মহররম মাসকে শাহারুল্লাহ বা আল্লাহর মাস বলেছেন। ইসলামের ইতিহাসে বহু গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা এ মাসে সংঘটিত হয়েছে। বিশেষ করে এই মাসের ১০ তারিখ বা আশুরাতে আদি পিতা হজরত আদম আ: সৃষ্টি, হজরত নূহ আ:-এর নৌযাত্রা ও প্লাবন, হজরত মূসা আ:-এর সমুদ্রপথে রওনাসহ ইসলামের ইতিহাসে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত এ মাসকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা।
মহররম মাসের নফল রোজাকে সর্বোত্তম নফল সাওম বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত, এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রমজানের পরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাওম হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের সাওম (মুসলিম, আস-সহিহ ২/৮২১)। এ মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনের সাওমের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আরাফার দিনের সাওম এ বছর ও আগামী বছরের পাপের কাফফারা। আর আশুরার সাওম এক বছরের পাপের কাফফারা হবে’ (মুসনাদে হুমাইদি-৪৩৩)। আশুরার দিনের সাওম এক সময় ফরজ ছিল। রমজানের সাওম ফরজ হওয়ার পর তা সুন্নত হয়ে গেছে। হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত, বলেন, ‘কুরাইশরা জাহেলি যুগে আশুরার দিন সাওম রাখত। রাসূলুল্লাহ সা: হিজরতের পর থেকে সাওম রাখতেন এবং সাহাবাদের সাওম রাখার নির্দেশ দেন। অতঃপর যখন রমজানের সাওম ফরজ হয়, তখন তিনি বললেন, যার ইচ্ছে সাওম রাখো, আর যার ইচ্ছে সাওম রাখবে না (সহিহ মুসলিম-১১২৫)। রাসূলুল্লাহ সা: ইহুদিদের বিরোধিতা করে ১০ তারিখের সাথে ৯ বা ১১ তারিখেও সিয়াম পালন করতে উৎসাহ দিয়েছেন। অর্থাৎ আশুরার আগের দিন বা পরের দিন মোট দু’টি রোজা রাখা সুন্নত।
কিন্তু আমাদের দেশে মহররম মাসের আশুরাকে কেন্দ্র করে আহলে সুন্নাহ ও শিয়া নামে দ্’ুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। ৬১ হিজরি ১০ মহররম রাসূলুল্লাহ সা:-এর দৌহিত্র জান্নাতে যুবকদের নেতা হজরত হোসাইন রা: সপরিবারে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণ করেন। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। কারবালার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিয়া সম্প্রদায় মহররম মাসে অনেক বিদ’আতের প্রচলন করেছেন। মহররম মাস আগমনের সাথে সাথে প্রথম দশ দিন তারা নিরামিষের নামে আমিষে ভরপুর খাবার খাওয়া, কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাজিয়া তৈরি ও সিজদাহ করা ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ঢাক, ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ব্যাপারে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। তার পরও তারা মহররম মাসে ঢাক, ঢোল ও তবলা বাজিয়ে শোক পালন করে। এ ছাড়া আশুরার দিন কারবালার যুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুক-পিঠ চাপড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে এবং ‘হায় হোসাইন, হায় হোসাইন’ মাতম করে। যার সাথে ইসলামী শরিয়তের সামান্যতম সম্পর্ক নেই। মূলত, হজরত হোসাইন রা:-এর বিরোধীরাই এসব বিদ’আত চালু করেছে। এসব বিদ’আত ও কুফুরি মুসলিম উম্মাহর ঈমান নষ্ট করে দিচ্ছে। এ মাসে ঝগড়াঝাটি বা যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেছেন, ‘আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এ নিষিদ্ধ মাসগুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না (সূরা তাওবা-৩৬)। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ইসলামবিরোধী এসব কাজ থেকে দূরে থাকা। রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নত তরিকায় মহররম মাসে আমল করা। লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com