ইংল্যান্ডের ফুটবলে হতাশার বৃত্ত ভাঙছেই না। ১৯৬৬ সালের পর বড় কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি তারা। গতবার ইউরো কাপের ফাইনালে তারা হেরেছিল ইতালির কাছে।
এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আরও একবার ফাইনালে স্বপ্ন ভাঙলো ফুটবলে জনকদের। ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন হলো স্পেন। তারাই এখন এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জেতা দল। জার্মানির বার্লিনে ম্যাড়মেড়ে প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি দুই দলের কেউই। স্পেনের দাপট থাকলেও ইংলিশরা গোল হতে দেয়নি। গোলশূন্য সমতায় বিরতিতে যায় দুই দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে জমে উঠে ম্যাচ। দুই দলই সেমিফাইনালের একাদশ থেকে এক পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে। স্পেন তাদের চিরাচরিত প্রথা বল দখলে এগিয়ে থাকে পুরো প্রথমার্ধ, কিন্তু গোলের দেখা পায়নি তারা।
ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের সামান্য ভেতর থেকে নিকো উইলিয়ামসের গোলমুখে নেওয়া শট ব্লক করেন ইংলিশ ডিফেন্ডার। ১৩ মিনিটের মাথা নরম্যান্ডের বাইসাইকেল কিক গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়। ২৮ মিনিটে আবারও সুযোগ পায় স্পেন। এবার ফাবিয়ান রুইজের শট ব্লক করে ইংলিশ ডিফেন্ডাররা। ৩৬ মিনিটে দানি ওলমোর দূরপাল্লার শট চলে যায় গোলবারের অনেক বাইরে দিয়ে। ৪৪ মিনিটে হ্যারি কেইনের ডিবক্সের ভেতরে নেওয়া বুলেট গতির শট ব্লক করেন স্পেনের রড্রি। ৪৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ডেকলাইন রাইসের ক্রসে ফিল ফোডেন বা পায়ের শট নিলে ভালোভাবেই সেটিকে তালুবন্দি করেন উনাই সিমন। পুরো ৪৫ মিনিটে কোনো দলই বলার মত সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। ৭০ শতাংশ বল নিজেদের দখলে নিয়ে রাখলেও ইংলিশ দুর্গ ভাঙতে পারেনি স্পেন।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় স্পেন। ৪৭ মিনিটে লামিন ইয়ামালের ক্রসে বক্সের বাঁ দিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন নিকো উইলিয়ামস (১-০)। দুই মিনিট পর নিকোই আরেকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। এবার দানি ওলমোর বাঁ পায়ের শট একটুর জন্য ডানদিকের পোস্ট মিস করে। ৫৬ মিনিটে নিকোর বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটও বেশ ক্লোজ ছিল। ৬৪ মিনিটে ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহাম বক্সের কাছে স্পেনের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন, কিন্তু সেটি ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট শট। ৬৬ মিনিটে দানি ওলমোর থ্রু বল ধরে লামিন ইয়ামিন বক্সের ডানদিক থেকে শট নিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি বাইরে বের করে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। অবশেষে ৭৩ মিনিটে সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। বেলিংহাম বক্সের মধ্যে বল পেয়ে সেটি কৌশলে দিয়ে দেন বাইরে দাঁড়ানো পালমারের কাছে। বাঁ পায়ের দূরপাল্লার এক শটে চোখ ধাঁধানো এক গোল করেন চেলসির উইঙ্গার (১-১)। তবে সেই সমতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। ৮৬তম মিনিটে মার্ক কুকোরেলার ক্রস থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে সেটি জালে ঢুকিয়ে দেন মিকেল ওয়ারজাবাল (২-১)।
শেষ মূহূর্তে এসে (৯০ মিনিটে) দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল ইংলিশরা। বক্সের মধ্যে ডেকলান রাইসের হেড ঠেকান স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমন। ফিরতি বলে আবার হেড করেছিলেন মার্ক গুয়েহি। এবার গোললাইনে দাঁড়িয়ে সেটি আটকে দেন দানি ওলমো। ফের রাইসের হেড একটুর জন্য জাল পায়নি।
সেটিই ছিল ইংল্যান্ডের শেষ সুযোগ। কাজে লাগাতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উল্লাসে মাতে স্পেন শিবির।