রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

ক্ষমতাধর তিন জালিম শাসকের পরিণতি

মুফতি ইবরাহিম সুলতান:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৪

পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন, যা সর্বযুগে সমানভাবে প্রযোজ্য, যার পরিবর্তন কখনো ঘটেনি। তেমনি মহান সত্তা আল্লাহ তাআলা নিজেও তার ওপর কিছু বিষয় নিষিদ্ধ ও হারাম করেছেন, যার অন্যতম একটি—কারো প্রতি জুলুম বা অত্যাচার না করা। এক হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার ওপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব, তোমরা একে অপরের ওপর অত্যাচার কোরো না। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৬৬)
এর পরও যারা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করে অন্যের প্রতি জুলুম করেছে, আল্লাহর শাস্তি তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়নি। ইতিহাসের পাতায় তাদের সেই জুলুম এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের শাস্তির কথা পরবর্তীদের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখানে ক্ষমতাধর তিন অত্যাচারী শাসকের ভয়াবহ শাস্তির কথা তুলে ধরা হলো—
নমরুদের জুলুম ও তার ভয়াবহ শাস্তি: পৃথিবীর ইতিহাসে আল্লাহর সঙ্গে প্রথম ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী ও নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অত্যাচারী হিসেবে পরিচিত ছিল নমরুদ। আল্লাহকে নিঃশেষ করার জন্য আসমান অভিমুখে টাওয়ার নির্মাণ এবং নিজেকে প্রভু দাবি করার দুঃসাহস করেছে এই জালিম।
দীর্ঘ ৪০০ বছরের শাসনামলে সে পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল চরমপর্যায়ে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা শাস্তিস্বরূপ একটি মশা তার নাকে প্রবেশ করান। মশার অসহ্যকর জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত পর্যন্ত করে; কিন্তু এতেও তার শেষরক্ষা হয়নি, বরং শাস্তির মাত্রা আরো বহুগুণ বেড়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি ওই ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করোনি, যাকে আল্লাহ রাজত্ব দান করার কারণে সে নিজ প্রতিপালকের (অস্তিত্ব) সম্পর্কে ইবরাহিমের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হয়? যখন ইবরাহিম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক, যিনি জীবনও দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান।
তখন সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইবরাহিম বলল, আচ্ছা, আল্লাহ তো সূর্যকে পূর্ব থেকে উদিত করেন, তুমি তা পশ্চিম থেকে উদিত করো তো! এ কথায় সেই কাফির নিরুত্তর হয়ে গেল। আর আল্লাহ এরূপ জালিমদের হেদায়াত করেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৮)
ফেরাউনের ঔদ্ধত্য ও প্রভু দাবি: মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়ের ওপর ফেরাউনের উদ্ধত আচরণ এবং নিষ্ঠুর অত্যাচারের কথা কে না জানে! স্বয়ং আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তার অত্যাচারের চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘ফেরাউন জমিনে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণিকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রেখেছিল, যাদের পুত্রদের সে জবেহ করত ও নারীদের জীবিত রাখত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৪)
তার উদ্ধত আচরণের মাত্রা এত বেশি ছিল যে একবার নিজ সম্প্রদায়ের কাছে নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক’ দাবি করে বসল। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সে বলল, আমিই তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। পরিণামে আল্লাহ তাকে পাকড়াও করলেন আখিরাত ও দুনিয়ার শাস্তিতে। যে ভয় করে তার জন্য অবশ্যই এতে রয়েছে শিক্ষা।’ (সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ২৪-২৬)
নিজ সম্প্রদায়ের ওপর সীমাহীন অত্যাচার এবং প্রভু দাবি করায় আল্লাহ তাআলা তাকে এত কঠিন শাস্তি দিলেন যে পৃথিবীর মানুষের জন্য তা বিরাট এক শিক্ষণীয় উদাহরণ হয়ে আছে। কোরআন মজিদে তার শাস্তির কথা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল, তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সেনাদের পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করে ডুবিয়ে মারলাম। এবার দেখো, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে!’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৩৯-৪০)
কারুনের দাম্ভিকতা ও করুণ পরিণতি: সুরা কাসাসে আল্লাহ তাআলা কারুনের জুলুম ও তার শেষ পরিণতির কথা এভাবে তুলে ধরেন, ‘কারুন ছিল মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। কিন্তু সে তাদেরই প্রতি জুলুম করল। আমি তাকে এমন ধনভা-ার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। স্মরণ করো, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ কোরো না, নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না। সে বলল, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি জানত না যে আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতেও তার অপেক্ষা প্রবল ছিল এবং লোকবলেও বেশি ছিল? অপরাধীদের তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হয় না। পরিণামে আমি তাকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। তার সপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না, যারা আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে। ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সব লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য দেখাতে ও ফাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকিদেরই অনুকূল থাকবে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৬-৮৩)। মহান আল্লাহ সদাসর্বদা আমাদের জীবন জুলুমমুক্ত রাখুন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com