রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

চলুক দান-সদকায় প্রতিযোগিতা

ফাহিম হাসনাত:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

আমরা সবাই কমবেশি আরবের জাহেলিয়াত সম্পর্কে জানি। হেন কোনো পাপকাজ নেই যা তখন তারা করেনি। মেয়েকে জীবন্ত দাফন, মদ, জুয়া, জিনা, ব্যভিচার ইত্যাদি সব পাপকাজে টইটম্বুর ছিল তখনকার সমাজ। কিন্তু এতসব অন্যায় ও পাপকাজের মধ্যেও তাদের একটি বিশেষ গুণ ছিল যার জন্য পুরো বিশ্বে তাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়টি আমাদেরও বেশির ভাগ মানুষের অজানা। আর তা হলো তাদের দানশীলতা।
নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে ভ্রষ্টতার নি¤œপর্যায়ে পৌঁছলেও দয়া-দাক্ষিণ্য কিংবা বদান্যতার ব্যাপারে বিশ্বে তারা ছিল শীর্ষে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলত এবং এ ব্যাপারে তারা কথা বলে গর্ব করত। তাদের বদান্যতা বাস্তবিক পক্ষেই এতই উচ্চমানের ছিল যে, তা মানুষকে বিস্ময়ে অভিভূত করত।
জুয়া খেলা পাপ, কিন্তু তারা জুয়া খেলে মনে করত যে এটিও হচ্ছে তাদের দয়া-দাক্ষিণ্যের একটি পথ। কারণ এর মাধ্যমে তারা যে উপকৃত হতো তার কিছু অংশ অসহায় কিংবা মিসকিনদের দান করে দিতো। এ কারণে কুরআন মাজিদে তৎকালীন আরবিয়দের মদ ও জুয়ার উপকারকে অস্বীকার করা হয়নি; বরং এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ওই দুটোর উপকারের চেয়ে পাপ অধিকতর জঘন্য’ (সূরা বাকারা-২১৯)।
আমরা তো সভ্য সমাজ। আমরাও চাইলে দানের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করতে পারি। দান করা নিঃসন্দেহে মহৎ গুণ। রাসূল সা: বলেন, ‘শুধু দু’জন লোকের ওপর ঈর্ষা করা যায়। একজন হলেন সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের জ্ঞান দিয়েছেন আর সে রাত-দিন তা চর্চা করে। অপরজন হলেন যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন আর রাত-দিন সে তা মানবকল্যাণে খরচ করে’ (বুখারি)।
চিন্তা করুন, ইসলাম ধর্ম যেখানে হিংসা করা বা ঈর্ষা করাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে ঠিক সে ধর্মেই দানের ব্যাপারে ঈর্ষা করাকে প্রশংসা করা হয়েছে। তবে সেটি এই অর্থে যে, অমুক এত টাকা দান করেছে, আমিও আল্লাহর খুশির জন্য তার চেয়ে বেশি টাকা দান করব। অর্থাৎ দানের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করার জন্য উৎসাহ দিয়েছে।
আমরা চাইলে কিছু ছোট ছোট ক্ষেত্রে দান করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। ধরুন, কোথাও যাওয়ার জন্য দামাদামি করে ৪০ টাকা দিয়ে একটা রিকশা ভাড়া করলেন। সেখানে যাওয়ার পর ৪০-এর জায়গায় ৫০ টাকা দিলেন। তখন উনার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখিয়েন কিরকম আনন্দের একটি চাপ প্রকাশ পায়। ইনশা আল্লাহ, এই সামান্য দানের বদৌলতেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের উত্তম বিনিময় দান করবেন। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এ ব্যাপারে কুরআন মাজিদে বলেন- ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা চর্চা করে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের পালন কর্তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে পুরস্কার। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হবে না’ (সূরা বাকারা-২৬২)।
অপর দিকে কৃপণদের ব্যাপারেও রাসূল সা:-এর রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ দানকারীর সম্পদের বরকত দান করুন (বিনিময়ে সম্পদ আরো বৃদ্ধি করুন)। আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দোয়া করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের সম্পদ ধ্বংস করে দিন’ (বুখারি ও মুসলিম)। যারা দান করতে চায় না বা দানের ব্যাপারে কৃপণতা দেখায়, ওই সব কৃপণ শুনে রাখুন, তৎকালীন আরবদের চেয়েও এ ব্যাপারে আপনি বেশি জাহেল তথা মূর্খ। লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com