৪ বছরের অবুঝ শিশু নিয়ে দিশেহারা বাবা
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে জুমার নামাজের সময় বাড়িতে পুরুষ না থাকার সুযোগে বখাটে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী ও শাশুড়ীকে ছুরিকাঘাত করলে ঘটনাস্থলে স্ত্রীর মৃত্যুর ১৪ দিনের মাথায় চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছে শ্বাশুড়ি পারভীন আক্তার(৩৮) ও। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ভোর ৫টায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শাশুড়ী পারভিন আক্তার। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বেঁচে থাকা ৪ বছরের অবুঝ শিশুকে বুকে নিয়ে দিশেহারা বাবা। নিহত পারভীন আক্তার চকরিয়া পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ড মজিদিয়া মাদ্রাসা পাড়ার ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের স্ত্রী। অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি দুপুরে জুমার নামাজের সময় বাড়িতে পুরুষ না থাকার সুযোগে বখাটে স্বামী শওকত হাসান মেহেদীর শ্বাশুর বাড়িতে এসে তার স্ত্রী হাফসা মনি(১৬) ও শ্বাশুড়িকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার স্ত্রী হাফসাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে গুরুতর আহত হাফসার মা পারভীন আক্তারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারী হাসপাতাল পার্ক ভিউতে ১৪দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় পারভীন আক্তার মারা যান। একই দিনে স্ত্রীকে হত্যা ও শাশুড়ীকে ছুরিকাঘাতের ৭ ঘন্টার মধ্যে ঘাতক মেহেদীকে পার্বত্য লামা থানা পুলিশের সহায়তায় লামা বাজার থেকে গ্রেফতার করে চকরিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন হাফসার পিতা আবদুল হামিদ। মামলায় মেহেদীর মা-বাবা ও বোনকেও আসামি করা হয়েছে। জানা যায়, চকরিয়ার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার শওকত হাসান মেহেদীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ৯ ম শ্রেণীতে পড়ুয়া হাফসা মনি(১৬)র বিয়ে হয়। প্রেমের সম্পর্কের বিয়ে হওয়ায় উভয় পরিবার প্রথমে মেনে না নিলেও পরে মেনে নেয়। এক পর্যায়ে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে চাপ দেয় শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় স্ত্রী হাফসা তার পিতার বাড়িতে চলে আসে। ঘটনার আগের দিন মেহেদী শ্বশুর বাড়িতে এসে তার স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চাইলে পরিবারের লোকজন ছাড়া হাফসার পিতা মেয়েকে স্বামীর হাতে তুলে দেয়নি। পরে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘটনার দিন শুক্রবার জুমার নামাজের সময় অতর্কিত এসে মেহেদী স্ত্রী হাফসা ও তার মা পারভীন আক্তারকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ওইসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটা উদ্ধার করা হয়। চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়া বলেন, ঘটনার ৭ ঘন্টার মধ্যে পার্বত্য লামা উপজেলার বাজার এরাকা থেকে খুনি মেহেদী কে গ্রেফতার করেছে হত্যা মামলা রেকর্ড করেছে চকরিয়া থানা পুলিশ। বাকী আসামীদের ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান। এরই মধ্যে আহত অপর নারী পারভিন আক্তারও চট্টগ্রামের হাসপাতালে মারা গেছে যা সত্যিই দু:খ জনক। স্ত্রী ও কন্যা হারানো পরিবারের কর্তা আব্দুল হামিদ একজন সাংবাদিক ও চকরিয়া নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী। তাঁর পরিবারের বড় পুত্র গত বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ বখাটে জামাতার হাতে কন্যা এবং ১৪ দিনের মাথায় মারা গেল স্ত্রীও। বর্তমানে তাঁর পরিবারে ৪ বছরের এক শিশু রয়েছে। যাকে নিয়ে বাকরুদ্ধ আব্দুল হামিদ।