শনিবার (২১ নভ্ম্বের) সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় ছিলো কুয়াশাও। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সেই সাথে ছিল হাল্কা বাতাস। ঘণ্টাখানেক এমন অবস্থায় ঝালকাঠি জেলায় আবাদকৃত আমন ধান মাটিতে হেলে পড়েছে।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাস, সন্ধ্যার পূর্বেও এমন আবহাওয়া ছিল। জেলার ৪ উপজেলার শতশত হেক্টর জমির আমন ধান মাটিতে হেলে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশায় সময় পার করছেন কৃষকরা। এরপূর্বে ঝালকাঠি জেলার সর্বত্র আমন ধানে খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। ফসল রক্ষায় কীটনাশক দিয়েও তেমন উপকার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। সেই সাথে রয়েছে ইঁদুরের উপদ্রবও। সবমিলিয়ে কৃষকরা এখন আমনের ফলন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দিন কাটাচ্ছে। সদর উপজেলার ছত্রকান্দা, বৈদারাপুর, গাবখান, বেরপাশা, দেউলকাঠি, রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া, শুক্তাগড়, কাঠিপাড়া, পাড়গোপালপুর গ্রামে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম খলিফা জানান, একাধিকবার প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে ৩বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। প্রতিবছরের চেয়ে এবছর চাষাবাদে খরচও হয়েছে আড়াইগুণ। এতো অতিরিক্ত খরচ, তারপরেও শেষ সময়ে আমন বীজ ভালোই হয়েছিল।
ভালো ফসলের আশায় ধানের জমিতে দেয়া হয়েছিলো পরিমাণমতো সারও। কিন্তু শনিবার সকালের এবং শেষ বিকেলে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাস হওয়ায় ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। এরপর যদি ভারী বর্ষণ এবং পানি বৃদ্ধি না হয় তাহলে ধানের ক্ষতি কম হবে। আর যদি আবহাওয়া খারাপ হয় তাহলে সব ধানই চিটা হয়ে যাবে। দরিদ্র কৃষকের এমন খরচের পরে যদি কাক্সিক্ষত ফলন না হয় তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা ও হতাশায় পড়েছেন কৃষক শাহ আলম খলিফা। শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী তালুকদার জানান, নয় কাঠা জমিতে আমনের আবাদ করেছি। বীজের চেহারা পরিবর্তনের সাথে সাথেই পাতামোড়া ও খোলপচা রোগ দেখা দিয়েছে। তিনি মরা ধানের ছোপা ও মোড়ানো পাতার ভেতরে পোকার অসংখ্য সাদা ডিম থেকে ছোট ছোট লম্বাকৃতির পোকা হয়ে ধানের পাতা মরে যাচ্ছিল।
কৃষি বিভাগ ও দোকানদারের পরামর্শে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করায় পোকার দমন হয়েছে। কিন্তু এখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাসের কারণে ধান মাটিতে লুটিয়ে (হেলে) পড়ায় মাথায় যেন ঠাডা (বজ্রপাত) পড়েছে।
সদর উপজেলার বৈদারাপুর গ্রামের কৃষক চান মিয়া জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। দফায় দফায় বন্যা কাটিয়ে মূল খরচের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ করে বীজ ফলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। যখনই বীজ ভালো হয়ে উঠছিলো তখনই খেতে খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগ দেখা দেয়। উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করায় কিছুটা পানোজ (চেহারার পরিবর্তন) ফিরছে। বীজে ধান আসতে শুরু করেছে। এমন সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাস হওয়ায় অধিকাংশ ফসলই মাটিতে হেলে পড়েছে। এখন কি করবো তা বুঝতেছি না।
দেউলকাঠি গ্রামের পরিমল মন্ডল জানান, ৩বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। প্রায় মাসখানেক পূর্বে সার দিয়েছি। বীজ এখন ঘনসবুজ আকৃতির হয়ে ওঠে ধান আসতে শুরু করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ধানের ছড়ার প্রাথমিক শস্য আসবে। এমন অবস্থায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাসের কারণে ধান সব মাটিতে নুয়ে পড়েছে। জেলা কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক জানান, এ বছর জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতেই কয়েকদফা বন্যা, অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, রোপণকৃত আমনের চারা পচে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। চাহিদার চেয়েও এক হাজার হেক্টরে অতিরিক্ত বীজতলা এবং ১২০টি বেডে ভাসমান বীজতলা করায় বীজের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কোনো কোনো এলাকায় খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগ স্বল্পাকারে দেখা দিয়েছিলো, তা প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার মাধ্যমে প্রতিকার হয়েছে। শনিবারের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে হাল্কা বাতাস হওয়ায় ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। এরপর যদি ভারী বর্ষণ এবং পানি বৃদ্ধি না হয় তাহলে ধানের ক্ষতি কম হবে। আর যদি আবহাওয়া খারাপ হয় তাহলে সব ধানই চিটা হয়ে যাবে। এ অবস্থায় যদি প্রণোদনা আসে তাহলে সুষম বণ্টন করে দেয়া হবে।