প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতিবেদন উপস্থাপন
দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বৈদেশিক সহায়তায় অনুদানের পরিমাণ ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ শতাংশ, বাকিটা ছিল ঋণ। এখন সেই অনুদানের পরিমাণ নেমেছে তিন শতাংশে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করার প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল সোমবার (২৩ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গণভবনপ্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বৈদেশিক সহায়তার অবস্থা কী সেই বিষয়ে ছিল এই উপস্থাপনাটি। সেখানে ১৯৭১-৭২ থেকে এই পর্যন্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত যদি একটা তুলনা করি সেখানে দেখা যাবে, ১৯৭১-৭২ সালে আমাদের বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে গ্র্যান্ট (অনুদান) ছিল সর্বোচ্চ ৮৪/৮৫/৮৬ শতাংশ, ঋণ ছিল ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ম্যাক্সিমামটাই (বেশিরভাগ) দান হিসেবে আসতো।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯-১০ সালের দিকে গিয়ে অনুদান এসেছে ৩০ শতাংশের মতো, ৭০ শতাংশের মতো আসল ঋণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুদান আসছে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশের মতো, আর ৯৫ শতাংশই আসছে ঋণ হিসেবে।’
‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কীভাবে শিফট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে অনুদান আরও কমে গেছে, ২/৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, ৯৭ শতাংশেই আসছে লোন হিসেবে। আমরা আর দানের ওপর নির্ভর করছি না। আমরা আমাদের নিজস্ব দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমরা রি-পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোনোদিনই ডিফল্ডার হইনি। এটা একটা বড় সাকসেস।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯৭-৯৮ সালে আমাদের (বৈদেশিক সহায়তার) ডিসবার্সমেন্ট (অর্থছাড়) ছিল ৭৪৮ মিলিয়ন ডলার, তখন আমাদের জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল ঋণের পরিমাণ। ২০১৯-২০ সালে আমাদের ডিসবার্সমেন্ট হচ্ছে সাত হাজার ১২১ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু এটা আমাদের জিডিপির মাত্রা ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে আমাদের ডমেস্টিক ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেড়ে গেছে। তাই এত টাকা বাড়ার পরও জিডিপির সঙ্গে এর অনুপাতটা অনেক কমে এসেছে।’
‘শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ৪৪ হাজার ২৩ মিলিয়ন ডলার। এটা জিডিপির ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ঋণের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বিশ্বব্যাংকের, ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এডিবির, জাপানের জাইকার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৮১, রাশিয়ার ৬ দশমিক ১৪, ভারতের এক দশমিক ৩ এবং অন্যান্য ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এই হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক ঋণ।’
১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে আমাদের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) পাঁচ হাজার ১০৩ কোটি টাকা ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এরমধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ছিল তিন হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। এর মানে এডিপির ৬৩ শতাংশ ছিল বৈদেশিক সহায়তা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এডিপিতে ফরেন এইডের কন্ট্রিবিউশন ছিল ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের এডিপি হয়ে গেছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সাহায্য আসছে ৫১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বেড়েছে কিন্তু পার্সেন্টেজ নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ২৫-এ। আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ এত বেড়ে গেছে যে, বাইরের লোন আসলেও এটা শতাংশের হারে অনেক নিচে।’
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ঝুঁকি নেই। বৈদেশিক ঋণ যখন জিডিপির ৪০ শতাংশ বা এর বেশি হয়ে যায় তখন ঝুঁকি থাকে। আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ হলো ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আমরা অনেক সেফটিতে আছি আল্লাহর রহমতে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০ শতাংশ পর্যন্ত সেফটি রেঞ্জ। আমরা অনেক নিচে আছি।’