বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন না হলেও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক লক্ষ্য করা গেছে। চলতি মৌসুমে আমন ক্ষেতে রোগবালাই ও শেষের দিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমন ধানের এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। চলতি মৌসুমে ধানের ফলন গড়ে প্রতি বিঘায় ১৪ থেকে ১৬ মণ হারে ফলন হলেও ধানের দাম চড়া হবার কারণে কৃষকদের প্রতি বিঘায় লাভ থাকছে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আদমদীঘি উপজেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৭ হাজার ৮শ বিঘা। এর মধ্যে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে ৯২ হাজার ২শত ৫০ বিঘা জমিতে। আর এসব জমিতে বিভিন্ন প্রকার ধানের চাষ হলেও স্বর্ণা-৫, ব্রি-৪৯, ব্রি-৩৪, বিনা-৭ এবং কাটারী ধানের চাষ উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে স্বর্ণা-৫ এর চাষ করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে। এবার প্রায় ৬৭ হাজার বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে এলাকায় কিছু নতুন জাতের ধানও আবাদ করা হয়েছে যেমন ব্রি-৮৭ ও ব্রি-৯০ এর নাম উল্লেখযোগ্য। কৃষি অফিস সূত্রে আরোও জানা গেছে, নতুন এ দু’ জাতের ধানের বৈশিষ্ট্য হলো এ ধান গুলোর জীবন কাল সমাপ্ত হয় খুব কম সময়ের মধ্যে। তেমনি ফলনও স্বর্ণা-৫ এর মতই। এ ধানের জীবন কাল সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে কৃষকরা এ ধান আগে ভাগে ঘরে তুলতে পারে এবং সেই গুলি জমিতে রবি শস্য ফলানো সম্ভব হয়। প্রতি বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে জমির ভাড়া মূল্য, সার, কীটনাশক ও যাবতীয় খরচ বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৬ মণ হারে। বর্তমানে আদমদীঘিতে ধানের দর প্রতি মণ ১১৫০ থেকে ১২০০ শ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত ধানের মূল্য প্রায় ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এতে কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে লাভ থাকছে প্রায় ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাছাড়া এবার আদমদীঘিতে প্রতি বিঘার খড় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। এতে করে কৃষকদের আরোও লাভ থাকছে ২ হাজার টাকা। উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুসুম্বী গ্রামের কৃষক আলিমুদ্দিন জানান, এবারে ধানের আবাদ করে লাভ পাওয়ায় বেশ খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা। তিনি আরোও জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষকরা। তবে এবার ফলন কিছুটা কম হলেও ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা বেশ খুশি। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং আগামীতেও যদি এ রকম দাম বেশি পায় তাহলে অত্র এলাকার কৃষকরা ধান চাষে আরোও উৎসাহি হয়ে উঠবে। তিনি আরোও জানান, একই জমিতে বার বার একই জাতের ধান চাষ করলে ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করা উচিত।