সরবরাহ বাড়ায় শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলার দাম আরও কমেছে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ শীতের সবজির দাম কমলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিমের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শিমের দাম তিনভাগের একভাগে নেমেছে। শীতের সবজির দাম কমায় ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। তবে আলু ও পেঁয়াজের দামে অস্বস্তি রয়েই গেছে। যদিও সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে ৬৫ টাকার নিচে দেশি পেঁয়াজের কেজি মিলছে না। আর সরকারের বেধে দেয়া দামের তোয়াক্কা না করে আগের মতই বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ টাকা কেজি।
শিমের পাশাপাশি শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও কমেছে। মাঝারি সাইজের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আর ছোট ফুলকপি গত সপ্তাহের মতো ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ছোট ফুলকপির দাম ৪০ টাকার ওপরে ছিল। মাঝারি আকারের বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আর ছোট বাঁধাকপির পিস ২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মূলা এখন ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। শীতের সবজির দাম কমার সঙ্গে অন্য কিছু সবজির দামও কমেছে। গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। বাজারে নতুন আসা কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। বাজারে নতুন আসা শীতের আরেক সবজি শাল গমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আর চড়া দামে বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম কিছুটা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
তবে গাজর ও বরবটির দাম আগের মতোই চড়া রয়েছে। বাজার ও মান ভেদে গাজরের কেজি আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বরবটি গত সপ্তাহের মতো ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে এবং উস্তে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ দুটি সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে ঢেড়স, ঝিঙা, পটল, উসি, কচুর লতি। অবশ্য গত সপ্তাহে এ সবজিগুলোর দাম কিছুটা কমে। ঢেড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা; যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়া উসি ও ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে চলে এসেছে। দুই সপ্তাহ আগে এই দুই সবজির কেজি ৬০ টাকার ওপরে ছিল। ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কচুর লতির দাম কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে সরকার দু’দফায় দাম বেঁধে দিলেও এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সরকার প্রথমে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং পরবর্তীতে ৩৫ টাকা বেঁধে দেয়। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া এই দামে ক্রেতারা আলু কিনতে পারছেন না।
আলুর সঙ্গে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে পেঁয়াজের জন্যও। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন ৬৫ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আমদানি করা বড় পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ আগের সপ্তাহের মতো এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ী মিলন সরদার বলেন, বাজারে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মূলা সবকিছুর সরবরাহ বেড়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে শাল ও কাঁচা টমেটো আস্তে শুরু করেছে। মে কারণে সবজির দাম কমছে। সামনে সবজির দাম আরও কমবে। ১২০ টাকার শিম এখন ৩০ টাকা হয়েছে। কিছুদিন পর শিমের কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা হবে। কারওয়ানবাজার থেকে বাজার করা জিয়াদুল ইসলাম বলেন, শিম, ফুলকপির দাম কিছুটা কমেছে। এতে ভালো লাগছে। তবে পাকা টমেটো ও গাজরের কেজি এখনো ১০০ টাকা। বরবটি, বেগুনের কেজি ৫০ টাকার ওপরে। এসব সবজির দাম না কমা পর্যন্ত সবজির বাজারে স্বস্তি আসবে না।
খিলগাঁও তালতলা বাজার থেকে বাজার করা আলেয়া বেগম বলেন, সরবরাহ বাড়ায় শিম ও কপির দাম কিছুটা কমেছে। তবে আলু ও পেঁয়াজ আগের মতোই ভোগাচ্ছে। বাজারে নতুন আলু আসার পরও পুরাতন আলুর কেজি ৪৫ টাকা কিনতে হচ্ছে। আর বাজারে ভরপুর দেশি পেঁয়াজ থাকার পরও কেজি ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং কিছু সবজির দাম কমার ফলে বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে এ কাথা বলা যাচ্ছে না। খিলগাঁওয়ে ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, শীতের সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। নতুন আলু বাজারে এসেছে। কিছুদিন পর মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আসবে। তখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমবে বলে আমরা আশা করছি। সেই সঙ্গে আস্তে আস্তে আলু দামও কমবে। এদিকে গত সপ্তাহের মতো এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। তবে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহে ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে।