ঝামেলা ও বিপদ থেকে বাঁচার একটি উপায় হলো ঘরে বসে (অবসর) সময় ব্যয় করা। আমরা আজ এই কথার বাস্তবতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সন্তানের বাইরে থাকা বাবা-মায়ের জন্য সবচেয়ে আতঙ্ক। স্বামীর বাইরে থাকা স্ত্রীর জন্য আতঙ্ক। তাই রাসূল সা:-এর উপদেশ- ঝামেলা থেকে বাঁচতে হলে ঘরে বসে (অবসর) সময় পার করতে হবে। আল্লামা তিবি রহ: অবশ্যই বলেছেন, রাসূল সা: ঘরে বসে সময় পার করার কথা বলেছেন, যেন ঘরে বসে আল্লাহর জিকির, ইবাদত করা ও বাইরের লোকদের সাথে মেলামেশা থেকে বিরত থাকা যায়।
বিপদ, মুসিবত, দুঃখ-বেদনার সময় আমরা সবাই বিচলিত হয়ে যাই, অস্থির হয়ে যাই, এটিই স্বাভাবিক। তবে এ সময় ধৈর্য ধারণ করে, যদি একটি দোয়া পড়েন তাহলে আশা করা যায় বিপদ চলে যাবে। যে দোয়াটি এসেছে বুখারি ৬৩৪৫ নং হাদিসে, দোয়াটি হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লøাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’
অর্থ- অতি সহনশীল মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। মহান আরশের প্রভু আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আকাশ ও জমিনের প্রভু আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই এবং তিনি সম্মানিত আরশের প্রভু। দোয়া অর্থ আল্লাহকে ডাকা, কিছু চাওয়া, প্রার্থনা করা অর্থাৎ বিনয়ের সাথে মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রার্থনা হলো দোয়া।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো, যারা আমার ইবাদতে অহঙ্কার করে তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং লাঞ্ছিত হবে’ (সূরা মুমিন, আয়াত-৬০)। এ আয়াতে বোঝা যায়- আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ডেকে বলেন, কে আছো? আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। (স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডেকে ডেকে বলছেন, কে আছো? আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। তা হলো- আমাদের দেশের কোনো মন্ত্রী যদি বলে, তোমরা আবেদন করো সবাইকে আমি চাকরি দেবো। তখন আমরা সবাই নিশ্চিত আবেদন করব, কেননা স্বয়ং মন্ত্রী নিজেই বলেছেন আমি তোমাদের চাকরি দেবো। আর আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং আমাদের ডেকে ডেকে বলছেন- কে আছো? আমাকে ডাকো তোমরা যা চাও তাই দেবো। তাই আমাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে তাঁর কাছে চাওয়া। মনে রাখা জরুরি, দোয়ার কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। বান্দা যত মূর্খ বা পাপি হোক আল্লাহকে ডাকলে বা আল্লাহর কাছে কিছু বললে বা চাইলে আল্লাহ সরাসরি তা শুনতে পান।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রহ: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান যখন অন্য কোনো মুসলমানের জন্য দোয়া করে যার মধ্যে কোনোরূপ গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা থাকে না, আল্লাহ তায়ালা এই দোয়ার বিনিময়ে তাকে তিনটির যেকোনো একটি দান করেন, তা হলো- ১. তার দোয়া দ্রুত কবুল করে থাকেন; ২. তার প্রতিদান আখিরাতে দেয়ার জন্য রেখে দেন কিংবা; ৩. তার থেকে অনুরূপ আরেকটি কষ্ট দূর করে দেন।’ প্রিয় নবী সা:-এর কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করব। রাসূল সা: বললেন, আল্লাহ আরো বেশি বেশি দোয়া কবুলকারী।’ তায়ালার কাছে চাওয়া বন্ধ করে দেই। এটি মোটেও ঠিক নয়। তবে দোয়া কবুলের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। তা হলো- * দোয়াকারীর খাদ্য, পানীয় ও পোশাক পবিত্র হতে হবে। * দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ব্যস্ত না হওয়া। * দোয়ার সময় উদাসীন বা বেখেয়াল না হওয়া। * দোয়া কবুলের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী হওয়া (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, তিরমিজি)।
বিপদে রাসূল সা:-এর আরেকটি উপদেশ হলো- অতীতের অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। বিপদ-মুসিবত থেকে বাঁচতে রাসূল সা:-এর এ উপদেশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতের অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: বলেন ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই গোনাহ করতে পারে। কিন্তু গোনাহগারদের মধ্যে উত্তম হচ্ছে সে, যে গোনাহ করার পর তওবা করে ফিরে আসে’ (আল হাদিস)।
মোট কথা- উত্তম হলো তওবা করে ওই কাজ না করার অঙ্গীকার করে ফিরে আসা। অন্যায় করার পর অনুতপ্ত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর স্মরণ করো জুুননুনের (মাছওয়ালা ইউনুছ) কথা, যখন সে ক্রোধভরে বের হয়ে গেল এবং মনে করল, আমি তার প্রতি কোনো সঙ্কীর্ণতা করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল আপনি ছাড়া কোনো (সত্য ইলাহ নেই, আপনি মহান পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি ছিলাম জালিম’ (সূরা আম্বিয়া আয়াত-৮৭)।
শেষ কথা- বিপদ-মুসিবতে পড়লে রাসূল সা:-এর উপরিউক্ত নির্দেশিত পথে চললে সব বিপদ-মুসিবত দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে সে পথে অটল থেকে ধৈর্য ধারণ করার দৃঢ় ঈমান দান করুন। আমীন। লেখক : প্রধান শিক্ষক, পিরামিড বর্ণমালা স্কুল, দক্ষিণ পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।