রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২০ অপরাহ্ন

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি বিএনপি’র

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২১

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল বলেছেন যে, ভ্যাকসিনের মূল্য ৪২৬ টাকা পড়বে। এই মূল্যটা কী সরকার প্রদান করবে নাকি জনগণকে প্রদান করতে হবে- এই বিষয়টা ক্লিয়ার না।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে সরকারের এই বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা রোডম্যাপ অর্থাৎ সব কিছু নিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ, মূল্য, কতজনকে দেয়া সম্ভব হবে, কাদেরকে দেয়া হচ্ছে এর একটা রোডম্যাপ অবশ্যই জনগণের সামনে প্রকাশ করার দাবি আমরা জানাচ্ছি।’
‘বিনামূল্য ভ্যাকসিনের দাবি’: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি যে, উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের জন্য ইতিমধ্যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। আমরা খবর পেয়েছি যে, গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব এই সমস্ত ক্লাবগুলোতে যারা সদস্য আছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আরো শুনতে পারছি যে, সরকারের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের জন্য করা হচ্ছে, মন্ত্রীদের জন্য করা হচ্ছে।’
‘কিন্তু সাধারণ মানুষ কিভাবে এই ভ্যাকসিনটা পাবে, কখন পাবে-সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা সরকারের কোন দফতরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি। আমাদের যেটা বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষ যেন বিনামূল্যে ভ্যাকসিন পায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রথমদিনই বলেছেন যে, এটা জনগনকে বিনা মূল্যে দেয়া উচিত।’ ‘টিকা বাংলাদেশে কবে পৌঁছাবে’ তা নিয়ে জনগণকে সরকারের সঠিকভাবে তথ্য দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
‘ব্যাক্সিমকো কত কমিশন পাচ্ছে’: মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট তারা ভ্যাকসিনটা অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রোজেনার থেকে কিনেছে। দেয়ার আর পারচেজ অব ফর্মূলা এন্ড দে উইল প্রডিউজ ভ্যাকসিন, তারা তৈরি করবে। তারপরে সেটা ব্যাক্সিমকো বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। আমাদের প্রশ্ন হলো- এটা তো পরিস্কার হতে হবে জনগণের কাছে যে, এটা সরকার না কিনে ব্যাক্সিমকো কিনলো কেনো?’
‘ব্যাক্সিমকো কি এখানে কমিশন আছে? কত কমিশন আছে? ব্যাক্সিমকোর কত কমিশন আছে সেটা আমরা জানতে চাই। মূল্য কত দিতে হবে। সিরাম ইনস্টিটিউটকে সরকার টাকা দিচ্ছে। কার মাধ্যমে দিচ্ছে? ব্যক্সিমকোর ফার্মাসিটিক্যালসের মাধ্যমে দিচ্ছে। হোয়াই। সরকার নিজে সিরাম ইনস্টিটিউটকে দিচ্ছে না কেন?’
তিনি বলেন, ‘জানার অধিকার আছে জনগণের। আপনি প্রশ্ন করেছেন, এখানে অন্য কোনো কিছু আছে কিনা। পরিস্কার তো। হোয়াই এ প্রাইভেট কোম্পানি ইনসাইড দেয়ার। যদি বুঝতাম যে, ব্যাক্সিমকো আগে টাকা দিয়ে এটা কিনে নিয়েছে। তাহলে বুঝতাম যে, আমাদের সরকারের টাকা নেই, তারা টাকা দিয়েছে বলে তাদেরকে একটা কমিশন দিতে হচ্ছে।’
‘তাও তো না। এখানে সরকার ৬‘শ কোটি টাকা জমা দিচ্ছে। আজকে হোক, কালকে হোক দিয়ে দেবে। তাহলে হোয়াই ব্যাক্সিমকো ইনসাইড। এটা কী এজন্যে যে তিনি এই সরকারের উপদেষ্টা নাকি অন্য কোনো কারণ।’
‘সিরামের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে’: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সেইভাবে অফিশিয়ালি কোনো কিছু এনাউন্স করেননি। আমরা যেটা পত্র-পত্রিকায় দেখছি যে, এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনাটার যেটা ভারতের সিরাম ইন্সটিউট থেকে। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে সিরাম ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে বাংলাদেশে নেবে। সেটাও নিচ্ছে একটা বেসরকারি ফর্মাসিটিক্যালস কোম্পানি ব্যাক্সিমকো ফর্মাসিটিক্যিালস কোম্পানির মাধ্যমে। আমরা জানি না- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট এটাকে ডিল করছে অথবা সরসারি যে কোম্পানি প্রস্তুত করছে তাদের সাথে ডিল করছে।’
‘আমরা এই কথাটা বারবার বলছি যে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন বিতরণ এটা অত্যন্ত প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল ও বিশেষ ব্যাপার। আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি যে, আজ-কালকের মধ্যেই সম্ভবত আজকেই ৬‘শ কোটি টাকা ব্যাক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছে দেবে। সেটার পর তারা ৬ মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। তাতে করে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।’
‘করোনা সংক্রামণে সরকারের তথ্য সঠিক নয়’: করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে সরকারের দেয়া তথ্য-পরিসংখ্যান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সরকার তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, গতকাল পর্যন্ত ৫ লক্ষ ১৫ হাজার ১৮৪ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং মারা গেছে ৭ হাজার ৫১৯জন। আমরা বারবার বলেছি এই তথ্য সঠিক নয়। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে বাড়িতে। তারা কিন্তু রিপোর্টও করছেন না, হাসপাতালেও যাচ্ছেন না, বাড়িতে মারা যাচ্ছেন অথবা সংক্রমিত হচ্ছেন। সরকারের পরীক্ষা করবার যে নীতি চলছে এটা যথেষ্ট নয় যে সঠিক চিত্রটা উঠে আসবে। আমরা মনে করি যে, এটা গ্রোস নেগলেজেন্সি।’
‘এই বিষয়টা মানুষের জীবনের সাথে জড়িত, এদেশের মানুষের সাথে জড়িত এটা নিয়ে সরকারের সুষ্ঠু বক্তব্য নিয়ে আসা উচিত, পরিকল্পনা করা উচিত। আমরা আগেও বলেছি এই যে, তথ্য সরকার দিচ্ছে, ডাটা যে দিচ্ছে সংক্রামণ ও মৃত্যুর তা সঠিক নয়। আমরা করোনা সংক্রামণ ও মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান দাবি করছি।’
বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের কমিটি: করোনা সংক্রামণের বিষয় সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটি সদস্য হলেন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম এবং বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয় সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই কমিটি অবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রদান পর্যন্ত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করবে এবং সেই তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে তারা আমাদের জাতির সামনে তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ তুলে ধরবেন।’
এসময় বিএনপি মহাসচিব জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন এবং সদ্য প্রয়াত মহিলা পরিষদের সভানেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com