সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রিয় নীড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ৩০ জন বসবাস করছে। এদেরকে নিজ কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বি হয়ে উঠতে গড়ে দেওয়া হয়েছে বড় ধরনের একটি গো খামার। এখন এরা গো খামার থেকেই স্বাবলম্বি হওয়ার আশা করছে। এরই মধ্যে স্বভাব আচরনে এদের মাঝে বেশ পরিবর্তন এসেছে। এরা ৩০জন মিলে এক খানার সংসার পেতেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে, উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের ধোপাকান্দি এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গ ধারীদের পুনর্বসনে প্রিয় নীড় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও উল্লাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্বরস্বতী নদী পাড়ে ইটের গাথুনির দেওয়ালের উপর টিনের ছাউনিতে আলাদা ৪টি বসতঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি বসত ঘরে ৫টি করে রুম রয়েছে। এখানে ২০ জনের বসবাস ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে আলাদাভাবে ওয়াশরুম ব্যবস্থা। একটি বড় আকারের কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। গত বছরের মার্চ মাস থেকে ২০ জনের বসবাস করার রুমে এখন ৩০ জন বসবাস করছে বলে জানানো হয়। সরেজমিনে গিয়ে আরো দেখা গেছে বসত ঘরের সামনে বসতিরা ফুলের বাগান করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সবজি ফসলের চাষ করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে এখানে বড় ধরনের একটি গো খামার গড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০টি গাভী গরু লালন পালন করা হচ্ছে। একজন কর্মচারী রাখা হয়েছে গরু লালন পালনে। এর মাসিক বেতন ১২ হাজার টাকা। গরু লালন পালনে খাদ্য সামগ্রী কিনতে মাসে ৯ থেকে ‘১০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানানো হয়। গো খামারের কর্মচারীর বেতনের টাকা ও গো খাদ্যের টাকা বসতিরাই দেয়। খামারে উৎপাদিত দুধ স্থানীয় বাজারে নিজেরাই বিক্রি করে বলে জানায়। এছাড়া ছাগল, মুরগী, হাসঁ পালন করা হচ্ছে। সমাজসেবা বিভাগ থেকে এখানকার বসতি ১৫ জন হিজড়াকে মাসিক ৫শ টাকা করে হিজড়া ভাতা দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পে বসবাসরত হিজড়ারা জানায় তারা কর্মের মাধ্যমে স্ববলম্বি হতে চায়। আর্থিক স্বচ্ছলতা চায় যাতে কারো কাছে আর হাত পেতে টাকা চাইতে না হয়। স্বাবলম্বি হলে তাদের দেখাদেখি অন্য হিজড়ারাও স্বাবলম্বি হতে আগ্রহী ও উৎসাহি হবে। তাদের কাছে এরা অনুকরণীয় হবে। এখানকার বসতি ৩০ জন একসাথে মিলেমিশে থাকছে। এরা খাওয়া দাওয়া এক রান্নায় সবাই এক সাথেই করে। প্রিয় নীড় প্রকল্পে বসতিদের নেত্রী আলো সরকার জানায় তাদের বসবাস প্রকল্প এলাকা ঘিরে নিরাপত্তায় জরুরীভাবে বাউন্ডারী দেওয়াল নির্মাণ দরকার রয়েছে। এছাড়া স্বরস্বতী নদীতে জমে থাকা বর্জ ও দুষিত পানি তাদের জন্য বেশ দুর্ভোগের হয়েছে। তাদের বসবাস নদীপাড়ে হওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। এটি পুনঃখনন করা হলে দুর্ভোগ থাকবে না বলে জানায়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মোতালিব জানান, গত নভেম্বর মাসে প্রিয় নীড় প্রকল্পের ১৫ জন হিজড়ার প্রতি জনকে মাসিক ৫শ টাকা করে এক বছরের হিজড়া ভাতার টাকা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান ভুইয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি কমিটির মাধ্যমে এদেরকে স্বাবলম্বি হয়ে উঠতে সার্বিক বিষয়ে তদারকি, তত্ত্বাবধায়ন, প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভুমি), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রাণী সম্পদ অফিসার, সমাজসেবা অফিসার ও সমবায় অফিসার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এ প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গের ২০ জনের স্থায়ী বসবাস ব্যবস্থা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে এদেরকে স্বাবলম্বি হয়ে গড়ে উঠতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পে বাউন্ডারি দেওয়াল নির্মাণ বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।