রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শিবগঞ্জে উত্তম মাছচাষ শীর্ষক মতবিনিময় সভা মেলান্দহের আদ্রা ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ জিয়ানগর আরাফাত রহমান কোকো ক্রীড়া সংসদ এর কমিটি গঠন আল-আমিন সভাপতি, জুয়েল রানা সাধারন সম্পাদক মালিকানা দ্বন্দ্বে বন্ধ আরনু জুটমিল, দিশেহারা শ্রমিকরা টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রার দলিল লিখক স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সম্পাদক বকুল পটুয়াখালীতে সদর উপজেলা বিএনপির জনসমবেশ ও জনসমুদ্র গৌরনদীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দোকান ঘরে নিহত-১, আহত-৬ অবশেষে যানজট মুক্ত হচ্ছে তিলোত্তমা শহর নওগাঁ খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ-ভারত পানি বণ্টন : মীমাংসায় জটিলতা কোথায়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২১

অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদী অমিমাংসিত ইস্যু। দুদেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানির বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তাসহ আলোচনায় থাকা আটটি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। গঙ্গা চুক্তির পর আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারটি। ২০১১ সালে দুদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে সব প্রস্তুতি নেয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় তা সম্পন্ন করা যায়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত আন্তঃসীমান্ত নদী বা অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি। ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি কমিটি তিন বছর পর গত ৫ জানুয়ারি থেকে দুই দিন বৈঠক করেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বৈঠকটি হয়েছে ভার্চুয়ালি।
বৈঠকে অভিন্ন ছয়টি নদীর পানি বণ্টনে একটি কাঠামো চুক্তি কীভাবে করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এই নদীগুলো হচ্ছে মনু ও মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার। যৌথ নদী কমিশনের একজন বিশেষজ্ঞ, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে চুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চুক্তির মাধ্যমেই একটি দেশের পানির হিস্যা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হয়। তিনি যৌথ নদী কমিশনের এবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন । তিনি জানিয়েছেন, মূলত ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলাপ হলেও তিস্তা ও ফেনী নদীর প্রসঙ্গও চলে এসেছে।
তিনি বলেন, ছয়টি নদী ভারতের যে রাজ্যগুলোর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ওই রাজ্যগুলোর সরকারও যেন আলোচনা বা চুক্তির প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকে, সেটা এখন বাংলাদেশ চাইছে। তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বাংলাদেশের সমঝোতা হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণে তা এগুতে পারেনি। বাংলাদেশ তাই রাজ্যগুলোর অংশগ্রহণ চাইছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। এই ছয়টি নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, এবারের বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে তাগাদা দেয়া হয়েছে ফেনী নদীর পানি প্রাপ্তির যে সমঝোতা হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে। ভারতের ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানির সঙ্কট মোকাবেলায় ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের ব্যাপারে ২০১৯ সালে সমঝোতা হয়েছিল।
বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাতে সম্মতি দিয়েছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কুশিয়ারা নদীতে একটি সেচ প্রকল্পের জন্য ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলনের জন্য খাল সংযোগের ব্যাপারে ভারতকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দুপক্ষই নিজ নিজ দেশের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে।
যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে দুই দেশের তাগাদা নিয়ে মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘এটা যদি না হয় তাহলে সাবরুম শহরে যেমন পানির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, আর বাংলাদেশেও বহু আগে থেকে একটি পাম্প হাউজসহ একটি সেচ প্রকল্প তৈরি করে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। এখানেও আমার কাছে মনে হয় এই দুটো বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশই বেনিফিট পাবে।’
ফেনী নদীর পানি দেয়া নিয়ে ২০১৯ সালে সমঝোতার স্মারক সই হলে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
পানি বণ্টনে জটিলতা কোথায়: বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের পানি বণ্টনের মীমাংসা শুধু দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়, এক্ষেত্রে ভারতের রাজ্য সরকারের স্বার্থ ও সম্মতির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিরও এখানে প্রভাব রয়েছে।
তারা বলেছেন, বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে থেকে রাজনৈতিক উচ্চপর্যায়ে যে ধরনের সংলাপ বা আলোচনার প্রয়োজন, সেটি যথাসময়ে করা সম্ভব হয়নি, এছাড়া সবপক্ষের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা যায়নি। যে কারণে অভিন্ন নদীর পানি সংক্রান্ত ছোটখাট বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকতে দেখা যায়।
যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মালিক ফিদা এ খান বলেন, ‘সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাই সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। কিন্তু আলোচনায় যদি আমরা সব স্টেকহোল্ডারদেরকে নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে দেখা যায় যে সবসময় সমাধানটা একদম সঠিক সময়ে হয় না।’
তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখে এর সমাধান সম্ভব।

‘দুই দেশই আমাদের পানির দক্ষ ব্যবহার করতে পারি, আমরা দুই দেশে অববাহিকা ভিত্তিক সামগ্রিকভাবে নদী ব্যবস্থাপনাকে যদি চিন্তা করি, তাহলে দেখা যাবে যে, এরকম অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তা আমরা দূর করতে পারবো’ তিনি বলেছেন।
এদিকে এখন ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের সবচেয়ে ভালো সময় অতিবাহিত করছে বলেই দুই দেশ দাবি করে থাকে। কিন্তু নানামুখী চেষ্টার পরেও তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশে চরম হতাশা আছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন দিল্লির বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো শ্রীরাধা দত্ত।
‘ফেডারেল পলিটিক্সে আপনারাতো জানেন, আমাদের অনেক কিছু আটকে থাকে। খোলাখুলি আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না যে কোথায় অসুবিধাটা হচ্ছে। কিন্তু এটুকু আমরা বুঝতে পারি যে এটা বাংলাদেশের কাছে ক্রিটিক্যাল একটা ইস্যু’।
দিল্লির এই বিশ্লেষক মনে করেন, দুদেশের মধ্যে পানি ভাগাভাগির ইস্যুতে মীমাংসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যেরও ঘাটতি আছে।
আমাদের বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের অভাব আছে। পানির প্রবাহ এমনিতে বোঝা যায় না, তার একটা লম্বা সময়ের স্টাডি দরকার। আমার ধারণা যে ফেডারেল পলিটিক্স বাদ দিয়েও যদি আমি দেখি আমাদের ওই স্টাডিটাও এখনো শেষ হয়নি।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, সহযোগিতা ছাড়া পানি বণ্টনের ইস্যুটি কোনোভাবেই মিমাংসা করা সম্ভব নয়।
‘আপনি আজকে একটা নদী নিয়ে কথা বলছেন কালকে আরেকটা নদী নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু যত দিন পর্যন্ত একটা অভিন্ন নীতিমালার মধ্যে দিয়ে যেতে পারবেন না ততক্ষণ এটা সমাধান করা কঠিন’ বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন থেকে ২০ বছরকে মাথায় রেখে এরকম একটা চিন্তা থাকতে হবে। যেটা আমরা রাখি নাই। আমাদের প্রতিবেশিদের মধ্যেও এই দৃষ্টিভঙ্গীর অভাব আছে। সেজন্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিস্তা ইস্যুতে আমরা অনেক পরে নজর দিয়েছি। যত দিনে নজর দিয়েছি, তত দিনে কিন্তু সমস্যাটা শুরু হয়ে গিয়েছে’।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com