স্বাধীনতার আগে দমন-পীড়নের ইতিহাস ভুলে নতুন করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুরুর আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশিদের জন্য সবধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে ইসলামাবাদ, বিনিময়ে বাংলাদেশের কাছ থেকেও একই সুবিধা চায় তারা। আলজাজিরা। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ দাবি জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূত ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি। ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, সকল পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে রাজি হয়েছে দুই পক্ষ। ইমরান আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, পাকিস্তানিদের জন্য বাংলাদেশের বিধিনিষেধ এখনও বহাল রয়েছে। একারণে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে (শাহরিয়ার আলম) জানিয়েছি, আমাদের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালে টানা নয় মাস পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ শেষে জয়লাভ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এতে সহযোগিতা করেছিল পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারত। শুরু থেকেই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চালু করলে বিরোধ আরও তীব্র হয়।
তবে আল জাজিরার বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি হত্যা, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাসের মতো বিষয়গুলোতে ভারতের ‘পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব’-এর কারণে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গত বছরের জুলাইয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফোন করেন। গত বৃহস্পতিবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফোন করেছেন পাকিস্তানি দূত। তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, উভয়পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা আন্তঃপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে সবশেষ এধরনের বৈঠক হয়েছিল ১০ বছর আগে।
একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বাংলাদেশ: একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
ঢাকায় পাকিস্তানের নতুন হাই কমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী গত ৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তাকে তিনি একথা বলেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রতিমন্ত্রী একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন এবং সম্পত্তির ভাগাভাগির মতো দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধানের বিষয় পুনর্ব্যাক্ত করেন।”২৫ বছর শোষণ-ব নার পর অধিকার আদায়ে বাংলার মানুষ সরব হলে ১৯৭১ সালে গণহত্যায় নামে পাকিস্তানি বাহিনী। তা প্রতিরোধে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। নয় মাসের ওই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। সেজন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এছাড়া আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সমস্যার সমাধান যেমন হয়নি; তেমনি বাংলাদেশ ২৫ বছর পাকিস্তানে থাকার ফলে সম্পদের যে ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার কথা, তাও পায়নি। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে সাফটা অনুযায়ী পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়া, নেতিবাচক তালিকা সহজ করা এবং বাণিজ্য বাধা দূর করার আহ্বানও জানান প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহযোগিতার সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন নতুন হাই কমিশনার। ২০১০ সালের পর থেকে ঝুলে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ সভা করার বিষয়েও একমত হয়েছে দুপক্ষ।