বৈশ্বিক পণ্যবাজারে গত বছর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল করোনা মহামারী। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে গভীর সংকটে পড়েছে পণ্য বাণিজ্য। মন্দার ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এমন সংকটকালে মানুষের উদ্বেগ বাড়ায় বছরজুড়ে চাঙ্গা ছিল খাবারের দাম। এ ধারাবাহিকতায় পরপর দুই বছর তুলনামূলক কম থাকার পর ২০২০ সালে বাড়তি দামে খাবার কিনেছে বিশ্ববাসী। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ফুড প্রাইস ইনডেক্সে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।
ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ছিল ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে এ সূচকমান ছিল ৯৫ পয়েন্টে। আর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে ছিল যথাক্রমে ৯৮ ও ৯৫ দশমিক ৯ পয়েন্টে। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে ২০২০ সালে ঘুরে দাঁড়িয়েছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক।
করোনা মহামারীর জের ধরে বিদায়ী বছরে বিশ্বজুড়ে শস্য, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেড়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে শস্যের বাজার। তবে আমিষ ও দুগ্ধপণ্যের দাম আগের বছরের তুলনায় কমে এসেছে। ২০২০ সালের শুরুটাই হয়েছিল বাড়তি দামে খাবার কেনার মধ্য দিয়ে। জানুয়ারিতে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১০২ দশমিক ৫ পয়েন্টে। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ৯৯ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্টে নামে। মার্চ ও এপ্রিলে এ সূচকমান ছিল যথাক্রমে ৯৫ দশমিক ১ ও ৯২ দশমিক ৪ পয়েন্টে। মে মাসে তা আরো কমে ৯১ পয়েন্টে নেমে আসে। ২০২০ সালে এটাই ছিল খাদ্যপণ্যের সর্বনিম্ন বৈশ্বিক সূচক।জুন থেকে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ওই মাসে এ সূচকমান ছিল ৯৩ দশমিক ১ পয়েন্টে। জুলাই ও আগস্টে তা বেড়ে যথাক্রমে ৯৪ পয়েন্ট ও ৯৫ দশমিক ৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বরে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৯৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে। অক্টোবর ও নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক আরো চাঙ্গা হয়ে যথাক্রমে ১০১ দশমিক ২ পয়েন্ট ও ১০৫ দশমিক ২ পয়েন্টে উন্নীত হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি দামে খাবার কিনেছে বিশ্ববাসী। এ সময় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক দাঁড়ায় ১০৭ দশমিক ৫ পয়েন্টে, যা গত বছরের সর্বোচ্চ। এ সময় চিনি বাদে সব ধরনের খাবারের দাম বাড়তির দিকে ছিল।
গত ডিসেম্বরে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ১২৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে উঠেছে, যা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। ২০২০ সালে এ সূচকমান তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়ে ৯৯ দশমিক ১ পয়েন্টে উঠেছে। করোনাকালে সয়াবিন তেল, পাম অয়েলের সরবরাহ কমে দাম বেড়েছে।
টানা ছয় মাসের চাঙ্গা ভাবের ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বরে খাদ্যশস্যের গড় মূল্যসূচক ছিল ১১৫ দশমিক ৭ পয়েন্টে। আর ২০২০ সালে তা ছিল ১০২ দশমিক ৭ পয়েন্টে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। মহামারীতে চাল, গম, ভুট্টাসহ বেশির ভাগ শস্যের চাহিদা চাঙ্গা ছিল। সেই তুলনায় অনেক শস্যের সরবরাহ ছিল সীমিত। স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে দাম।
ডিসেম্বরে চিনির মূল্যসূচক আগের মাসের তুলনায় দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৮৭ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে এসেছে। তবে ২০২০ সালজুড়ে এ সূচক ছিল ৭৯ দশমিক ৫ পয়েন্টে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বিদায়ী বছরে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক গড় মূল্যসূচক ১০১ দশমিক ৮ পয়েন্টে। আগের বছর তা ছিল ১০২ দশমিক ৮ পয়েন্টে। যদিও ডিসেম্বরে এ সূচকমান ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১০৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। সাত মাসের মধ্যে এটাই দুগ্ধপণ্যের সর্বোচ্চ দাম। একইভাবে গত বছর আমিষপণ্যের গড় মূল্যসূচক ১০০ থেকে কমে ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্টে নেমে এসেছে। যদিও ডিসেম্বরে এ সূচক ৯৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে ছিল, যা আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এ নিয়ে টানা তিন মাস ধরে চাঙ্গা রয়েছে আমিষপণ্যের বাজার।