এক ব্যক্তি দেড় বছর হলো সংসার পেতেছেন। এখন তো নতুন স্ত্রীও আর নতুন নেই। তবু বাসর রাতের সেই ঘটনাটা তার কাছে নতুন! অনন্য! অতুলনীয়। অবিস্মরণীয় হয়ে আছে একটি কারণে।
বাসর রাতে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ করতে তার হাতে একটা খাম দিয়ে তিনি বললেন- ‘‘এখানে একটা ‘মুদারাবা’ ফরম আছে। তোমার নামেই পূরণ করা। তুমি জাস্ট সইটা করে দিবে। প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে এক হাজার করে জমা হবে তোমার একাউন্টে। ১২ বছর পর তা ফিরে আসবে দ্বিগুণ লাভ নিয়ে।’’
তিনি ভেবেছিলাম স্ত্রী এতে খুব খুশি হবেন। ধন্যবাদ জানাবেন। কিন্তু না। তার চেহারা দেখে এমন কিছুই মনে হলো না। একটু পর স্ত্রী বললেন, বারো বছর পর আমাদের জমানো এক লাখ ৪৪ হাজার টাকা দুই লাখ ৮৮+ হাজার হয়ে যাবে। তাই তো?
: হুম!
: আচ্ছা আমি একটা ব্যাংকের ব্যাপারে জানি। যেখানে এর চেয়েও বেশি মুনাফা দেয়।
: কোনো ব্যাংক?
স্ত্রী উঠে গিয়ে কুরআন মাজিদ নিয়ে এলেন। সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতটি বের করে বললেন তরজমাটি পড়ুন।
: স্বামী আগ্রহ ভরে পড়তে লাগলেন। যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যে বীজ উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে ১০০ দানা। (অর্থাৎ ৭দ্ধ১০০=৭০০)। (তবে) আল্লাহ যাকে চান তার জন্য (আরো) বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
এরপর তিনি আয়াতের ব্যাখ্যা করতে থাকলেন। বললেন- আল্লাহ তায়ালা দানকে জমিনে ফসল চাষের সাথে তুলনা করেছেন। এতে সুগভীর কিছু শিক্ষা রয়েছে। যেমন ধরুন, ভালো চাষের জন্য, বেশি ফলনের জন্য তিনটা জিনিস লাগে। ১। একনিষ্ঠ চাষি। ২। ভালো জমি এবং ৩। ভালো বীজ।
অনুরূপদানে ৭০০ গুণ সওয়াব পেতে তিনটা জিনিস লাগবে। ১. দাতার বিশুদ্ধ নিয়ত। (অর্থাৎ একনিষ্ঠ চাষি) ২. দ্বীনি খাত। (অর্থাৎ ভালো জমি) ৩. হালাল সম্পদ। (অর্থাৎ ভালো বীজ)।
কেউ যদি দানের ক্ষেত্রে এই তিনটি দিক খেয়াল রাখে, তাহলে তার দান আখেরাতে ৭০০ গুণ তো হবেই। বরং আল্লাহ আয়াতের শেষ দিকে বলেছেন : আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।
স্ত্রী তার প্রাণাধিক স্বামীর হাতটা চেপে ধরে বললেন, আপনি যে টাকাটা আমার নামে দুনিয়ার ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন, সেটা ‘আমাদের’ নামে আল্লাহর ব্যাংকে রেখে দিন না! একটা দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করুন, প্রতি মাসে এই পরিমাণ অঙ্ক তাতে দান করবেন। ইনশা আল্লাহ আখেরাতে তা অন্তত ৭০০ গুণ হয়ে ফিরে আসবে।
যেদিন কোনো বন্ধু, কোনো অর্থ, কোনো আত্মীয়ই কাজে আসবে না! সেদিন এই দান কাজে আসবে।
পুরুষ লোকটি বললেন, আমি বোবা হয়ে গেলাম। চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে এলো। সেই থেকে আজ অবধি মাসিক দানে একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত। আলহামদুলিল্লাহ। কোনো মাসে বিলম্ব হলে ‘উনি’ স্মরণ করিয়ে দেন। আল্লাহ ওই দম্পত্তির মতো আমাদের সম্পদও কবুল করে নিন। আমিন। লেখক : সাবেক এডিশনাল এমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি: