ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে চালের বাজার। প্রতি কেজিতে অন্তত ২ টাকা করে কমেছে চিকন ও মাঝারি চালের দাম। চালের আমদানি শুল্ক কমানোর খবরে ৭ জানুয়ারি থেকে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ৮ দিনের ব্যবধানে চিকন ও মাঝারি চালের কেজিতে ৩-৪ টাকা করে কমেছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সরু মিনিকেট চাল ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৬০-৬২ টাকা, বি আর-২৮ চাল ৫৩-৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল মানভেদে ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী কাওসার রহমান বলেন, আমদানির চাল আসা শুরু হলে দাম আরও কমবে। এমন মনোভাবের কারণে বেচাকেনা কমে গেছে। ফলে দামও সামান্য কমেছে। বাদামতলী ও বাবু বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের দাম আরও কমবে। আমদানি হওয়া চাল বাজারকে শান্ত করতে সহায়তা করবে। সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমে আসবে।
কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ী কবির উদ্দিন বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম কমছে। গত ৯ দিনের ব্যবধানে চিকন ও মাঝারি চালের কেজিতে ৩-৪ টাকা কমেছে। পাইকারিতে এক বস্তা চাল (৫০ কেজি) ৫০-৬০ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসেবে, ১১ জানুয়ারি থেকে সরু ও মাঝারি চালের দাম কমেছে ২ শতাংশেরও বেশি। যদিও টিসিবির হিসেবে ১ জানুয়ারি চিকন চাল বিক্রি হয় ৬৬-৬৭ টাকা কেজি দরে। আর মাঝারি চাল বিক্রি হয় ৬০-৬২ টাকা কেজিতে।
দাম কমার তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ ও আলু। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় খুচরা বাজারে আকারভেদে ৩৫-৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি এখন ২০ টাকা। আর ৬০ টাকা কেজি আলু এখন ২০-২৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই আলু ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
বাজারে শীতের দু-একটি সবজির দামও কমেছে। তবে বেশিরভাগ শীতকালীন সবজি ২০-৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমের সরবরাহ বেড়েছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা, ১০ টাকা কেজি শালগম, মুলা ১০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে, ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বড় লাউ। গাজর বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি। বেগুনের কেজি ২০-৩০ টাকা, করলার কেজি ৩০ টাকা। সব ধরনের শাক বিক্রি হচ্ছে ৫-১০ টাকা আটি। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে এখনও ২০-৪০ টাকা।
তবে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৪-৫ টাকা বেড়ে ৬৬-৬৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য অনেক দোকানে এখনও আগে কেনা চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, খুচরা দোকানে চিনি বিক্রি হয় ৬৫-৭০ টাকা দরে। যা এক সপ্তাহ আগে ৬৪-৬৫ টাকা ছিল।
পুরান ঢাকার মৌলভী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী হাজী গোলাম মাওলা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে কোম্পানিগুলোর মিল গেটে বেশি দাম নিচ্ছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। দুই মাস আগে পাইকারি বাজারে ৫২ টাকা কেজি চিনি এখন ৬২ টাকার কিছু বেশি।
বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে কয়েক মাস ধরেই কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল ১২০-১২৫ টাকা, পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল বাজারভেদে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা।