নওগাঁর ঠাঁঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে খ্যাত সাপাহার উপজেলায় আম চাষের পাশাপাশী স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা আয়ে সুমিষ্ট মৌসুমী ফল উন্নত জাতের বরই কৃষকের ভাগ্যে উন্নয়নে নতুন চমক সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ ও বাজারজাত করণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে বাজারদর ভালো থাকার ফলে সন্তোষ প্রকাশ করছেন এলাকার বরই চাষীরা। স্বল্পমেয়াদে অধিক ফলন ও লাভবান হবার ফলে বরই চাষে এলাকার চাষীদের অধিক আগ্রহ দেখা গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, চলতি বছরে এ উপজেলায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের বরই। যার মধ্যে ১২ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে কাশ্মীরি ও ৩৯ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে বল সুন্দরী জাতের বরই। চলতি বছরে প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন বরই উৎপাদন হতে পারে।এছাড়াও এ অঞ্চলে কাশ্মিরী , বাউকূল, আপেল কূল, বলসুন্দরী জাতের বরইও চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে সুস্বাদু চাহিদা বেশি হবার ফলে এ উপজেলায় বলসুন্দরী জাতের বরই বেশী চাষ হচ্ছে। ফল চাষে মুনাফা অধিক ও মাটির গুণগত মান ভালো থাকায় এ উপজেলার কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার আরেক নাম বরই চাষ সংযুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সাপাহার উপজেলা আমের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। আম বাগানে সাথী ফল বাগান হিসেবে বরই চাষ সহ নতুন করে বরই বাগান তৈরীতে স্থানীয় কৃষকেরা ঝুঁকে পড়েছেন । তিনি আরো জানান, আম চাষ ব্যাপক লাভ জনক হলেও আম বাগান করার পর প্রায় দু বছর পর আম পাওয়া সম্ভব কিন্তু বরই স্বল্প সময়ে পাওয়া সম্ভব এবং এটি একটি লাভ জনক চাষ পদ্ধতি বটে। তাই অধিক লাভের আশায় কৃষকেরা বরই চাষে ব্যাপক ভাবে ঝুঁকে পড়েছে। ঠাঁঠাঁ এই বরেন্দ্র অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির গুণগত মান ভালো হবার ফলে বরই চাষ কৃষকদের জন্য লাভ জনক ও অনুকূল। বর্তমান সময়ে অনেক চাষী আম বাগানের মধ্যেই বরই চাষ করছেন বলে জানান এলাকার চাষীরা। স্বল্পমাত্রার পরিচর্যায় সহজে বরই চাষ করা যায় বলছেন এলাকার অনেক বরই চাষী। বরই চাষী সিরাজুল জানান, এ বছর প্রথম বরই বাগান করেছেন তিনি। আবহাওয়া ভালো হবার ফলে চলতি বছরে বরইয়ের উৎপাদন অনেক ভালো। বাজারে এ বছরে বলসুন্দরী জাতের বরই প্রতিমন বিক্রয় হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ শ’ টাকা। এরকম বাজার স্থিতিশীল থাকলে বরই চাষে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। বরই চাষী মামুন জানান, তিনি একজন ফল চাষী । তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বরইবাগান দেখে এসে নিজেই বরইয়ের বাগান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে কুড়ি একর জমিতে বরইয়ের বাগান করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক চাষ বলেও তিনি জানান। বরই বাগানে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয়না। প্রথমে গাছ লাগানো এবং জমি তৈরীর পর কীটনাশ ও যৎসামান্য পরিচর্যা ছাড়া কঠিন কোন পরিচর্যা করতে হয়না বলছেন বাগান পরিচর্যাকারীরা। তবে সবমিলিয়ে ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্রখ্যাত এ অঞ্চল বরই চাষে কৃষিখাতে একটি নতুন সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন এলাকার অভিজ্ঞমহল।