অবশেষে রাডারসহ অত্যাধুনিক অটোমেটেড এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রায় ১৬ বছর আগে রাডার স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও নানা অনিয়ম ও জটিলতায় আটকে ছিল এ প্রকল্প। জানা গেছে, অত্যাধুনিক এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ক্রয় প্রস্তাব শিগগিরই যাচ্ছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। ইতোমধ্যে জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতিতে ফ্রান্সের সঙ্গে আর্থিক প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। ফ্রান্সের থ্যালাস টেকনোলজি একটি আধুনিক রাডারসহ ২০ ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়ার সল্যুশনসহ একটি আধুনিক এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করবে। ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রস্তাব অনুমোদন করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। ফেব্রুয়ারিতে ক্রয়চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। চুক্তির পর পুরো সিস্টেম স্থাপন, চালু ও প্রশিক্ষণ শেষ করতে লাগবে প্রায় তিন বছর।
জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থাকা প্রায় ৩৮ বছরের পুরাতন রাডার দিয়ে চলছে দেশের আকাশপথ নিয়ন্ত্রণের কাজ। একইসঙ্গে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রেডিও ব্যবস্থাও পুরনো হওয়ায় মাঝে মাঝে দেখা দেয় বিপত্তি। তাই বিশাল সমুদ্রসীমা জয়ের প্রায় ৬ বছর পার হলেও এখনও সেখানকার আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নেই বাংলাদেশের। পুরনো রাডারের কারণে এ সীমানায় উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজগুলো শনাক্ত করা যায় না। তাই কোনও চার্জও আদায় করতে পারে না বেবিচক।
২০০৫ সালে পুরনো রাডার প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয় বেবিচক। এ কারণে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে প্রতিবেদন দেয় পরামর্শক। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০০৭ সালে। ২০১১ সালের মার্চে দ্বিতীয়বার দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে সময় রাডার ক্রয়ে ডেনমার্কের অর্থায়নের করার কথা থাকলেও টেন্ডারে দুর্নীতির অভিযোগ করে তা বাতিল করা হয়।
২০১২ সালে রাডার স্থাপন প্রকল্প পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করিম অ্যাসোসিয়েটস ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাব দেয়। ২০১৩ সালে রাডার স্থাপনের প্রকল্পটি ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। পরে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। পিপিপির ভিত্তিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে এ প্রকল্পের জন্য করিম অ্যাসোসিয়েটস প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দর প্রস্তাব দেয়। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের পর প্রকল্পের ব্যয় আবারও বাড়ানো হয়।
এরপর প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়ন করতে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। ২১ দিনের মধ্যে প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও সাত দফা তারিখ পেছায় বেবিচক। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ জুন দরপত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্র জমা দেয় দেশি-বিদেশি মোট চারটি প্রতিষ্ঠান। তখনও করিম অ্যাসোসিয়েটসকে যোগ্য বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা দেখিয়ে অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বেবিচক। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে রাডার ক্রয়ে বেবিচকের প্রস্তাবিত আর্থিক প্রস্তাব অতিরঞ্জিত হওয়ায় তা বাতিল করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রধান জাকিয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত চিঠি সিভিল এভিয়েশনে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন কমিটির পর্যালোচনায় প্রকল্পে সুপারিশকৃত দর অত্যধিক প্রমাণ হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র গ্রহণযোগ্য নয় বলে বিবেচিত হয়। পরে সরকারি অর্থায়নে রাডার স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠায় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই উদ্যোগেই ফ্রান্সের সঙ্গে জিটুজি’তে ক্রয়চুক্তি হতে যাচ্ছে।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, রাডারটি পুরনো হওয়ায় কার্যক্ষমতা কমছে। তবে নতুন করে আধুনিক এটিএম সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। থ্যালাস থেকে জিটুজি’তে কেনা হচ্ছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন হলে দ্রুত ক্রয়চুক্তি হবে।-বাংলাট্রিবিউন