মহামারী করোণার মাঝেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ ফলপ্রসু করছে স্বেচ্ছাসেবকরা। ব্যক্তি স্বার্থে নয় জাতীয় স্বার্থে ইলিশের উন্নয়নে অবদান রাখছে তারা। স্থানীয়দের মাঝে তারা এখন পরিচিতি পেয়েছে নদীর মানুষ ও ইলিশ রক্ষার কারিগর হিসেবে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বারেও (২০২০ সাল) ইলিশের প্রজনন মৌসুম ২২দিন মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু এ উপজেলার ৪২ কিলোমিটার বিষখালী নদী পথের ইলিশ শিকার, আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ সময় যাতে অসাধু ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা না মেনে অবৈধ জালের ব্যবহার করে ইলিশের ব্যপক ক্ষতি সাধন করতে না পারে এবং নদীতে অভিযানে জেলে- জাল আটক, আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানা কোন ধরনের আইন প্রয়োগ করতে হয় না হয় সে সব বিষয় তারা সামাল দেয়। জানা গেছে, ‘আমাদের সম্পদ, আমাদের দায়িত্ব’-এ শ্লোগান নিয়ে ২০১৭ সালে উপজেলা মৎস্য অফিস স্থানীয়ভাবে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে কার্যক্রম কে এগিয়ে নিচ্ছেন। নানা অনিশ্চয়তার মধ্যেও স্বেচ্ছাসেবকরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরুপ ইলিশ সম্পদ রক্ষায় ‘বেতাগী স্বেচ্ছাসেবক মডেল‘ ২০১৯ সালে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত হণ। মডেলের উদ্ভাবক তৎকালীণ উপজেলা মৎস্য অফিসার মোস্তফা-আল-রাজীব (যিনি বর্তমানে মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুরে কর্মরত) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ইতিবাচক ভূমিকা হিসেবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার উপস্থিত থেকে লাইট, রেইন কোটর্, ছাতা, লাইফ জ্যাকেট ও সম্মানি বিতরণ করে। সর্বশেষ বৃহাস্পতিবার হাড়কাঁপনো এই শীত বিবেচনায় রেখে স্বেচ্ছাসেবকদের ৪০ টি ভাল মানের কম্বল দেওয়া হয়। উপজেলার সড়িষামুড়ির ইউনিয়নের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়েসী স্বেচ্ছাসেবক হোসেন। শীতে বেশ কষ্ট পাচ্ছিলাম। তাই এই শীতের মধ্যে একটি কম্বল পেয়ে আমি খুবই খুশি। তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই নানাকিছু দেয় শুনি, কিন্ত এবারে আমরা সত্যিই দরকারি সবকিছুই হাতে পেলাম।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুহৃদ সালেহীনের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে শীতার্তের হাতে কম্বল তুলে দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান ফোরকান। অতিথিরা বলেন, শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা সময়োপযোগী কাজ করতে পেরে খুবই খুশী। এধরনের পদক্ষেপ খুবই প্রয়োজন। কম্বল বিতরণ কার্যক্রমে আরও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভাইস চেযারম্যান আমিরুল ইসলাম পিন্টু, বিদায়ী উপজেলা মৎস্য অফিসার মোস্তফা-আল-রাজীব, উপজেলা মৎস্য অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মো: কামাল হোসেন, বেতাগী প্রেসক্লাবের আহবায়ক সাইদুল ইসলাম মন্টু, সদস্য অলি আহম্মেদ ও উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মাসুদুর রহমান। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ, স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা এখানকার মানুষকে সচেতন ও জাগ্রত করার ক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করেছে। স্থানীয় জেলেদের মাঝে দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন এনে দিয়েছে। জেলেরা নদীতে না নামায় বিষখালী নদীতে এবারে প্রচুর ইলিশ ধরা পরছে। ‘ ইলিশ রক্ষায় বেতাগী স্বেচ্ছাসেবক মডেল’ কাজ শুরুর আগে মৎস্য বিভাগের অভিযান চলাকালীণ নদী অনিরাপদ হয়ে পড়ত আর এখন স্বেচ্ছাসেবকদল থাকায় নদীতে নামার কেউ সাহস দেখায় না। ফলে অভিযানের প্রায় শতভাগ সফলতা ও মা-ইলিশ নিধন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। উপজেলা মৎস্য জীবী সমিতির সভাপতি আব্দুররব সিকদার বলেন, এমনকি জেলেরা অনেকেই এখন বুঝতে পারছে সঠিকভাবে ইলিশ সম্পদ সুরক্ষা করতে পারলে সুফল তারা নিজেরাই ভোগ করতে পারবেন। তবে দ:ুখ জনক হলেও সত্য স্বেচ্ছাসেবকরা পারিবারিকভাবে কেউ স্বচ্ছল নয়। তার পরেও সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে উৎসাহের সাথে ইলিশ রক্ষায় কাজ করে অনুকরণীয় হয়েছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষার কাজে সম্পৃক্ত হতে পারায় স্বেচ্ছাসেবক শহীদুল ইসলাম হিরু অত্যন্ত খুশি। সংকটের মঝেও অসীম ব্রত নিয়ে আগামীতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এমনই অভিব্যক্তি তাদের চোখেমুখে। সর্বোপরি ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় এ উদ্যোগ সংশ্লিষ্টসহ অন্যান্যদের খুবই আশান্বিত করছে।