রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

বাজারে কবে আসবে আমদানি করা চাল?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২১

বাজারে এখনও আসেনি আমদানি করা চাল। কবে নাগাদ আসবে তা বলতে পারছে না কেউ। সরকার বলছে, অল্প সময়ের মধ্যেই আসবে এবং দামও কমবে। বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা চাল যথাযথভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ মোতাবেক কী পরিমাণ এলসি খোলা হচ্ছে, সে অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে কিনা, কোনও কারণে কার্যক্রম বাধার মুখে পড়ছে কিনা, কোথায় বিক্রি হচ্ছে এবং মাঠপর্যায়ে খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা মনিরিং করছেন কিনা, এ সব তদারকির জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি পর্যায়ে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির অপেক্ষায় পাইপলাইনে ২০ লাখ টনের বেশি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই আমদানি শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। যারা অনুমতি পেয়েছেন তাদের প্রত্যেককে শর্ত দেওয়া হয়েছে- আমদানির অনুমতিপত্র অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নিয়ে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে থাকা জেলাগুলো হচ্ছে দিনাজপুর, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, যশোর, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম।
এদিকে এখন পর্যন্ত বাজারে ভারতীয় চাল দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবরে এরইমধ্যে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে এখনও কোনও প্রভাব পড়েনি।
বাদামতলী ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত না নিলে দেশের চালের বাজার আরও অস্থির হতো। ভারত থেকে আমদানির ফলে বাজার স্থিতিশীল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আসবে দাম।
তিনি আরও জানান, চালের দাম বেশি কমলেও ক্ষতি। তখন দেশের কৃষক উৎপাদনে উৎসাহ হারাবে। প্রতিমণ ধান এখন ১২শ টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের দাম ঠিক আছে বলেও জানান নিজাম উদ্দিন।
উল্লেখ্য, দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ (শর্তসাপেক্ষে) করেছে সরকার। সরকারিভাবেও ৩৪ টাকা কেজি দরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি পর্যায়ে বা জিটুজি ভিত্তিতে ভারত থেকে স্বর্ণা, গুটিসহ কয়েক জাতের মোটা চাল আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনের দাম পড়ছে ৪০৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম ৩৪ টাকা ৫১ পয়সা। আতপ প্রতি টনের খরচ ৪১৭ ডলার ও কেজি ৩৫ দশমিক ১৬ টাকা। খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা হচ্ছে। বাজারে চালের দাম কমছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, হিলি স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে অপেক্ষায় থাকা চাল দেশে আসছে। সরকারি-বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টন আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমদানির অনুমতি নিলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এখনও এলসি খোলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ এসে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার টন, বাকিটা গম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারি গুদামে নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টন চাল থাকতে হয়।
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানিয়েছেন, সরকারের নিজস্ব মজুদের জন্য প্রাথমিকভাবে আমদানির পরিমাণ ১০ লাখ টন। তবে সরকারি পর্যায়ে আমদানির সর্বোচ্চ সীমা এখনও ঠিক করা হয়নি।
চলতি বছর সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সে অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সেদ্ধ, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে আট লাখ টন বোরো ধান কেনার কথা ছিল। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গতবছরের ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চাল এখন ৩৯৫ ডলার থেকে ৪৫০ ডলারে ওঠানামা করছে। গত বছরের আগস্টের তুলনায় এই দাম টনপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ ডলার বেড়েছে। তবে তুলনামূলক দাম কম ভারতে। সেখানে ৩৯৫ থেকে ৪১৬ ডলারের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেশী হওয়ায় আমদানি খরচও কম। তবে সূত্র জানায়, প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকেও আমদানি করবে সরকার।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com