শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

মজবুত ঈমানের উপায়

ড. মো: আবদুল কাদের
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২১

ঈমান শুধু বিশ্বাসের নাম নয়; বরং বিশ্বাস ও কর্মের সমষ্টি। ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকা ব্যক্তিদের ওপর সর্বদা আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়। কুরআনে এসেছে- ‘নিশ্চয় যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোনো’ (ফুসসিলাত-৩০)। রাসূল সা:কে মজবুত ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘তুমি বলো আমি আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছি, অতঃপর তার ওপর অবিচল থাকো।’
ঈমান বাড়ে এবং কমে। সৎকর্ম ঈমানকে বাড়িয়ে দেয়, অসৎকর্ম ঈমানকে কমিয়ে দেয়। ফলে এমন কিছু আমল রয়েছে যাতে ঈমান মজবুত হয়। যেমন- ১. মহান আল্লাহর গুণবাচক নামসহ তাঁর ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রাখা। রাসূল সা: বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি মর্মার্থ অনুধাবনসহ সেগুলো গণনা করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। এসব নামের অর্থ অনুধাবন মানুষকে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট করে, অন্তরে আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন করো যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে’ (সূরা আরাফ-১৮০)।
২. কুরআন-সুন্নাহসহ উপকারী ইলম অর্জন করা যা মানুষকে আল্লাহমুখী করতে সাহায্য করে। বিশেষত হালাল ও হারাম, উত্তম চরিত্র ও কুরআনের জ্ঞান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এমনিভাবে মানুষ, বিচরণশীল প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যেও রয়েছে নানা বর্ণ। বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল’ (সূরা ফাতির-২৮)।
৩. আল্লাহর সৃষ্টি জগত নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা। এছাড়া নিজ সম্পর্কে ও নিজের প্রতি আল্লাহর যে অগণিত নিয়ামতরাজি রয়েছে তা স্মরণ করা। এ সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নিদর্শন’ (সূরা ইমরান-১৯০)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তোমাদের নিজেদের মধ্যেও তোমরা কি চক্ষুষ্মান হবে না’ (সূরা নাজম-২১)?
৪. সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ রাখা। আল কুরআনে এসেছে- ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো’ (সূরা ইমরান-১৯১)।
৫. চিন্তা-গবেষণা ও অনুধাবনের সাথে কুরআন তিলাওয়াত করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে’ (সূরা আনফাল-২)। আরো বলা হয়েছে, ‘তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ’ (সূরা মুহাম্মদ-২৪)। কুরআনের অন্যত্র এসেছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’ (সূরা রাদ-২৮)।
৬. রাসূল সা:-এর যথাযথ আনুগত্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা জেনে রাখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অধিকাংশ বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে নিতেন, তাহলে তোমরা অবশ্যই কষ্টে পতিত হতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করেছেন। আর তোমাদের কাছে কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। তারাই তো সত্য পথপ্রাপ্ত’ (সূরা হুজুরাত-৭)।
৭. নিজের জন্য যা পছন্দ করবে অপর ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করা। অপর ভাইয়ের জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকেও অপছন্দ করা। এ সম্পর্কে নবী সা: বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে- ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া; ২. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা ও ৩. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা’ (বুখারি-১৬)। ৮. সব কাজে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করতে হবে। ৯. যাবতীয় হারাম ও অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ১০. আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবগুলো যথাযথ পালন করতে হবে।
সর্বোপরি যারা ঈমানের নেয়ামতে ধন্য হয়েছেন তারা সর্বদা ঈমানকে সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে নবায়ন করতে হবে। ঈমান বিধ্বংসী কোনো কাজের সাথে নিজেদের জড়িত করবেন না। পাশাপাশি আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতরাজি স্মরণ ও অধিক হারে তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমে ঈমানের ওপর অটল অবিচল থাকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com