গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার প্রয়াত মেয়র প্রার্থী শহিদুল্লাহ শহিদের স্ত্রী তিন সন্তান সহ ৮দিন ধরে নিজ বাসায় নজরবন্দি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়ায় এতিম পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন প্রয়াত শহীদের স্ত্রী। গতকাল বুধবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শহীদের স্ত্রী ৩ সন্তানসহ নজরবন্দি অবস্থায় থেকে জানান, গতকাল বুধবার সকালে শাহ আলম লোকজন নিয়ে তার বাসায় যাতায়াতের একমাত্র পকেট গেট ভেঙ্গে নিয়ে গেছেন। এ সময় তারা শহিদের বাসায় প্রবেশ করে একটি রুম থেকেও জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এর আগে মঙ্গলবার(২ ফ্রেব্রুয়ারী) রাতে শহিদের স্ত্রী শাহীন সুলতানা সুইটি গণমাধ্যমকে এই খবর নিশ্চিত করেন। গত কয়েকদি ধরে এই বিষয়ে মিডিযা পাড়ায় নানা গুঞ্জন চলে আসছিল। সুইটি জানান, তার স্বামী শহিদুল্লাহ শহিদ শ্রীপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দুইবার নির্বাচন করলেও শেষবার নির্বাচনের মাঝপথে মারা যান। এতে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর পুনরায়র তপসিল হয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে শহীদের ভাই শাহ আলম ধানের শীষের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে পরাজিত হন। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৫দিন মৃত্যুও সঙ্গে যুদ্ধ করে তার স্বামী ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। সুইটির ভাষ্যমতে, তার স্বামীর যাবতীয় চিকিৎসা স্বামীর ভাই শাহ আলম, মোস্তফা কামাল ও শহিদের ভগ্নিপতি হারুনর রশিদ সম্পন্ন করেন। স্বামীর চিকিৎসার কথা বলে চেকের মাধ্যমে ২০ লাখ ও নগদ ৫ লাখ সহ ২৫ লাখ টাকা নেয় তারা। কিন্তু চিকিৎসার বিষয়ে সুইটিকে আড়ালে রাখেন ওই তিনজন। পরবর্তি সময় স্বামীর মৃত্যু নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন তৈরী হলে সুইটিকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেন ওই তিন ব্য্যক্তি। এক পর্যায়ে ২৬ জানুয়ারী রাতে শাহ আলম সুইটির বাসার চারিদিকে তালা লাগিয়ে দেয়। সকাল বেলা একটি পকেট গেট খোলা থাকায় সুইটি বাইরে এসে দেখেন ৭টি গেটে তালা লাগানো। নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে সুইটি জানতে পারেন শাহ আলম তালা মেরে চাবি নিয়ে গেছেন। পরবর্তি সময় শাহ আলম শহিদের বাসায় অবস্থানরত শহিদের স্ত্রী ও সন্তানদের নজরবন্ধি করতে সিসি টিভির নিয়ন্ত্রনও নিয়ে নেয়। সুইইটি আরো জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর শাহ আলমগং তার স্বামীর সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করেন। সকল উপার্জন বন্ধ ও নজরবন্ধী থাকায় সুইটি তিন সন্তান সহ নিজ বাসায় আটকা পড়ে যায়। পারিবারিকভাবে এই ঘটনার কারণ জানতে ব্যর্থ হয়ে সুইট স্বাক্ষরিত একটি সাধারণ ডায়েরী তার বাবা শেখ আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারী শ্রীপুর মডেল থানায় পাঠান। ওই রাতেই শ্রীপুর থানার এসআই সুমন সুইটির বাসায় আসেন এবং ঘটনা তদন্ত করেন। পরদিন ৩১ জানুয়ারী সুইটির বাবা শেখ আব্দুর রাজ্জাক শ্রীপুর থানার ওসির সাথে দেখা করলে ওসি, শাহ আলম গং এসেছিল বলে জানিয়ে বিষয়টি আপোষ করবেন বলে রাজ্জাককে জানিয়ে দেন। এদিকে সুইটি যেন বাইরে যোগাযোগ করতে না পারেন সেজন্য সোমবার রাতে শাহ আলমগং সুইটির বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সুইটির দাবী, শাহ আলমগং তাকে ও তার তিন সন্তানকে তার স্বামীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য যে কোন সময় হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদেরকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করতে পারেন। বর্তমানে সুইটি তিন সন্তানসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন দাবী করে সরকারের নিকট নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহবান জানান।
পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য:
শ্রীপুর থানার ওসি ইমাম হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে পুলিশ সুুইটির বাসায় যায়নি, আসামীদের বাসায় গিয়েছেন বলে জানান ওসি। সুইটি সন্তানসহ অবরুদ্ধ কি না তিনি জানেন না। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুমন জানান, একটি জিডির আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি শহিদের বাসায় গিয়েছেন। সুুইটির সাথে কথা বলেছেন। সকল গেট বন্ধ ও একটি পকেট গেট খোলা থাকার কথা স্বীকার করলেও সুমন জানান, পরবর্তি সময় বাদী পক্ষ তার কাছে আসেননি। অথচ সুমনের কথামত বাদীর বাবা ওসির সাথে সাক্ষাত করেছেন।