শতবর্ষী ‘বকচর’ এর মাছের মেলায় দেখা মিলল ৩৪ কেজি ওজনের বাঘাইড়। মাছটির দাম হাঁকা হয় ৪৪ হাজার টাকা। মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার এনেছেন বাঘাইড়টি। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে মেলাটি বকচর মেলা হিসেবে পরিচিত। গত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হেউটনগর গ্রামের কোদলাপাড়ায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের মেলায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষের সমাগম ছিল।
বকচর মেলা ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলোতে আত্মীয়-স্বজনদের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে জামাইরা মেলা উপলক্ষে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। এ মেলা থেকে শ্বশুরবাড়ির জন্য জামাইদের বড় আকারের মাছ বা প্রচুর মিষ্টি কেনার প্রচলন রয়েছে।
এদিকে জামাইদের জন্য শ্বশুররা বড় মাছ ও প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি কেনে। এ জন্য মেলার প্রথম দিনকে ‘জামাই মেলা’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। মেলার পরের দিন সকাল বেলা শুধু নারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। যে কারণে মেলার দ্বিতীয় দিনকে ‘বউ মেলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
কালেরপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, হেউটনগর গ্রামে বাঙালি নদীর পূর্ব তীরে একশ বছর আগে থেকে একটি গ্রামীণ মেলা হয়ে আসছে। মেলার স্থানটিতে এক সময় জলাবদ্ধতা ছিল। সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে বক মাছ শিকার করত। এই কারণে স্থানটি বকচর হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা মেলাটিকে ‘বকচর মেলা’ হিসেবে নামকরণ করেছে। বর্তমানে ‘বকচর মেলা’ ধুনটের ঐতিহাসিক ও সমৃদ্ধ একটি গ্রামীণ মেলা।
জানা যায়, প্রতি বছর মাঘ মাসের তৃতীয় বুধবার এ মেলা বসে। এক দিনের মেলা হলেও মেলার কার্যক্রম মূলত তিনদিন হয়ে থাকে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এ মেলা উৎসব সৃষ্টি করে। এবারের মেলায় বাঘাইড়, রুই, কাতল, চিতল, ব্রিগেডসহ হরেক রকমের বড় বড় মাছ কেনাবেচা হয়েছে। তবে মেলায় আকর্ষণ সৃষ্টি করে ৩৪ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ। মাছটির প্রতিকেজির মূল্য ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। অন্যদিকে মেলায় অন্তত ২০ রকমের মিষ্টি কেনাবেচা হয়েছে। এ ছাড়াও মেলায় ছিল শিশুতোষ খেলনার দোকান, কসমেটিকস সামগ্রীর দোকান, নাগর দোলাসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন।
ধুনট বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই যুগ ধরে এ মেলায় মাছ নিয়ে আসি। এবার ৩৪ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় এনেছি। প্রতিকেজি ১৩০০ টাকা দরে মাছটির মূল্য চাওয়া হচ্ছে ৪৪ হাজার ২০০ টাকা।
মেলায় আগত আশরাফুল আলম বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা। শৈশব থেকেই প্রতিবছর বাবার সঙ্গে মেলায় আসতাম। এখন নিজেই আসি। মেলায় ঘুরি। কেনাকাটা করি। হেউটনগর গ্রামের আব্দুল আলীম বলেন, বকচর মেলা শতবছরের ঐতিহাসিক মেলা। প্রতিবছর নির্ধাতির দিনে এ মেলা হয়। যার কারণে মেলা ঘিরে কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসবের দোলা লাগে। বাড়ি বাড়ি স্বজনের ভিড় জমে। সবাই মেলায় আসেন, কেনাকাটা করেন। বগুড়ার গ-গ্রামের মাসুদ রানা। মেলা উপলক্ষে এসেছেন শ্বশুরবাড়ি। মেলায় এসে তিনি ২০ হাজার টাকা মূল্যের আইড় মাছ কিনেছেন। মাসুদ রানা বলেন, প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি আসি। এলাকার রীতি অনুযায়ী মেলা থেকে শ্বশুরবাড়ির জন্য মাছ কিনে থাকি।