পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় দেবনগর ইউনিয়নের আতমাগছ এলাকার জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তিন কৃষকের প্রায় এক একর জমির সরষে ক্ষেত আগাছানাশক দিয়ে ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছে। ফলন্ত সরষে গাছ এখন মরে যেতে শুরু করেছে। এতে তাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। ফলন্ত সরষে ক্ষেতের এই অবস্থা দেখে দিশেহারা ওই কৃষকরা। এ বিষয়ে তারা তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা হলেন দেবনগর ইউনিয়নের আতমাগছ এলাকার মৃত মজির উদ্দিনের ছেলে সকিন আলী, বাচ্চামদ্দীন ছেলে আমিনার রহমান ও আফিজ উদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম। অভিযোগে তারা জানান, পৈতৃক সূত্রে এই তিন কৃষক ৩ একর ৮৯ শতক জমি দীর্ঘ দিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিলেন। ওই জমির মধ্যে ১ একর ১৫ শতক জমিতে এবার তারা সরষে চাষ করেছেন। সরষে গাছগুলো বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠেছে। ফুল ফুটে এখন ফল ধরছে। ঠিক এই সময়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদের সরষে ক্ষেতে আগাছানাশক ছিটিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুরো সরষে ক্ষেত আগাছানাশকে ঝলসে গেছে। মরে যাচ্ছে ফলন্ত গাছগুলো। এতে ওই কৃষকদের প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই এলাকার মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে রহুল আমিন, এরশাদ আলী, আব্দুল জব্বার, আব্দুস সাত্তার ও চাঁন মিয়া রাতের আঁধারে আগাছানাশক ছিটিয়ে সরষে ক্ষেত ধ্বংস করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমিনার রহমান বলেন, আমরা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জমিগুলো চাষাবাদ করে আসছি। জমিগুলো আমরা পৈতৃক সূত্রে পেয়েছি। এসএ রেকর্ডও আমাদের নামে রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর আগে রহুল আমিন ও তার ভাইয়েরা জমিটি তাদের বলে দাবি করে আদালতে মামলা করে। মামলা রায়ের আগ মুহুর্তে তারা নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরে জরিমানা দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। তারপরও বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকি ধামকি ও হয়রানি করতে থাকে। গত মাসের ২৩ তারিখে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তারা তাদের স্বপক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আইনগতভাবে তারা না পেরে আমাদের সরষে ক্ষেত আগাছানাশক ছিটিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। যারা এভাবে ফলস নষ্ট করেছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। বিরোধী পক্ষের রহুল আমিন অভিযোগ অস্বীকার বলেন, তারা মিথ্যে অভিযোগ করছে। জমিটির মালিক আমরা। দেবনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহসিনউল হক বলেন, জমিটি ওই পৈতৃক সূত্রে সকিন, আমিনার ও হাফিজ ভোগ করে আসছে। তারা ওই জমিতে সরষেসহ বিভিন্ন ফসলও চাষ করেছে। গত মাসে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কিন্তু রহুল আমিনরা ওই জমি যে তাদের তার কোন কাগজ উপস্থাপন করতে পারেনি। পরে আমি তাদের দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেই। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, তারা আমার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছে। যেহেতু এটি অপরাধমূলক ঘটনা আমি তাদের আদালতের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে তাদের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আবেদন দিতে বলেছি। আবেদন পেলে আমরা তাদের কিছু সহযোগিতার চেষ্টা করবো।