২ বছরেরও বেশি সময় ধরে উন্নয়ন বঞ্চনায় বরিশাল নগরবাসী। দীর্ঘ সময়ে নতুন কোন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন কিংবা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। অর্থাভাবে প্রধান প্রধান কিছু সড়ক সংস্কার ছাড়া নতুন কোন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না নগর ভবন কর্তৃপক্ষ। নগরীর বিশিষ্টজনরা বলছেন, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ সরকারের প্রতিনিধি। তার উন্নয়ন ব্যর্থতার দায়ভার সরকারের। তাই সরকার বরিশাল সিটির উন্নয়নে বিশেষ নজর দেবে আশা করেন তারা। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নির্বাচিত হওয়ার পর একই বছরের ৩ অক্টোবর বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৪র্থ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের সাদিক আবদুল্লাহ। দায়িত্ব নেয়ার পর নগরীর ৪৭টি খালের ১০৯.৬১ কিলোমিটার পুনখনন, তীর সংরক্ষণ, ফুটপাত নির্মাণ, বিভিন্ন স্থানে ঘাটলা নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধন, আলোকায়ন ও বৃক্ষ রোপনের জন্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি এবং নগরীর ভঙ্গুর ৪০৫ কিলোমিটার রাস্তাঘাট, কালভার্ট-ব্রিজ ও ১৪৯.৭১ কিলোমিটার ড্রেনেড-ফুটপাত সংস্কার-উন্নয়নে ১ হাজার ১ শ’ ৮২ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। গত প্রায় ২ বছরেও এই দুটি প্রকল্প আলোর মুখে দেখেনি। বিসিসি’র এক প্রকৌশলী জানান, রাস্তাঘাট, ড্রেন-ফুটপাত, কালভার্ট-ব্রিজ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ১ শ’ ৮২ কোটি টাকার প্রকল্পটি কাটছাট করে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ১ হাজার ১শ’ ১৯ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে উপস্থাপিত হয়। একনেক ব্যয় কমিয়ে ফের ডিপিপি দেয়ার জন্য প্রকল্পটি ফেরত পাঠায়। ওই প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে ৬৮৩ কোটি টাকার একটি সংশোধিত ডিপিপি গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটি প্লানিং কমিশন থেকে অনুমোদিত হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় যাবে। অপরদিকে নগরীর ৪৭টি খাল সংস্কার ও উন্নয়নের ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেকে না পাঠিয়ে ব্যয় কমিয়ে ছোট ছোট ডিপিপি করে পাঠানোর জন্য গত জুলাই মাসে ফেরত পাঠায় প্লানিং কমিশন। প্রকল্পটি কাটছাট করে প্রায় অর্ধেক ডিপিপি করে ফের স্থানীয় সরকার মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই দুটি প্রকল্প আলোর মুখ না দেখলেও নগরীর বর্ধিত ও পুরনো এলাকা আলোকায়ন করার জন্য ২৭৬ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সিটি করপোরেশন। নগর ভবন সূত্র জানায়, গত ২ বছরে মন্ত্রণালয় থেকে ৪ দফায় থোক বরাদ্দ এসেছে মাত্র সাড়ে ১২ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় এবং থোক বরাদ্দ দিয়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতনও পরিশোধ করতে পারছে না তারা। বরাদ্দ না পেলেও নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৫ কিলোমিটার প্রধান প্রধান সড়ক সংস্কার এবং অলিগলি সড়ক মেরামত করেও নগরবাসীর মন ভরতে পারছে না সিটি করপোরেশন। বরিশালের নাগরিক পরিষদ নেতা কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, নগরীর বর্ধিত ও পুরনো এলাকার ৯০ ভাগের বেশি রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী। একটু ভারী বর্ষণ কিংবা জোয়ারের পানি নগরীতে প্রবেশ করলে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। পুরনো এলাকা সহ নগরীর বর্ধিত অনেক এলাকা রাতের বেলা অন্ধকার থাকে। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, সিটি নির্বাচনের সময় জনগণের আশা ছিলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হলে অনেক উন্নয়ন হবে। গত ২ বছরে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। সাদিক আবদুল্লাহ সরকারের প্রতিনিধি হওয়ায় তার উন্নয়ন ব্যর্থতা সরকারের উপর বর্তায়। উন্নয়ন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয়ে আগে পাঠানো ২টি সহ ৩টি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হলে বরিশাল নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে। এরপর আর উন্নয়ন করার জায়গা পাওয়া যাবে না। সরকারের উন্নয়ন সুবিধা নগরবাসীকে দেয়ার জন্য প্রকল্পগুলো দ্রুত অনুমোদন পাবে বলে আশা করেন তিনি।